রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের উপাদান, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ এবং রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ

সমাজ স্বীকৃত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীর একত্রে বসবাস করাকে পরিবার বলে। অর্থাৎ বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এক বা একাধিক পুরুষ ও মহিলা, তাদের সন্তানাদি, পিতামাতা এবং অন্যান্য পরিজন নিয়ে যে সংগঠন গড়ে ওঠে- তাকে পরিবার বলে। ম্যাকাইভারের মতে, সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনের জন্য সংগঠিত ক্ষূদ্র বর্গকে পরিবার বলে। আমাদের দেশে সাধারণত মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি ও দাদা-দাদির সমন্বয়ে পরিবার গড়ে ওঠে। তবে শুধু একজন মহিলা বা একজন পুরুষকে পরিবার বলা হয় না। মূলত পরিবার হলো মায়া, মমতা, ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গঠিত ক্ষুদ্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

[adToAppearHere]

পরিবারের শ্রেণিবিভাগ:

আমরা সবাই পরিবারে বাস করি। কিন্তু সব পরিবারের প্রকৃতি ও গঠন কাঠামো এক রকম নয়। কাজেই কতগুলো নীতির ভিত্তিতে পরিবারের শ্রেণিবিভাগ করা যায়।

যেমন- (ক) বংশ গণনা ও নেতৃত্ব

(খ) পারিবারিক কাঠামো ও

(গ) বৈবাহিক সূত্র।

[adToAppearHere]

ক. বংশ গণনা ও নেতৃত:

এ নীতির ভিত্তিতে পরিবারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে সন্তানরা পিতার বংশপরিচয়ে পরিচিত হয় এবং পিতা পরিবারে নেতৃত্ব দেন। আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবার এ ধরনের। অন্যদিকে, মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে মায়ের বংশপরিচয়ে সন্তানরা পরিচিত হয় এবং মা পরিবারে নেতৃত্ব দেন । যেমন- আমাদের দেশে গারোদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যায়।

খ. পারিবারিক কাঠামো :

পারিবারিক গঠন ও কাঠামোর ভিত্তিতে পরিবারকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা- একক ও যৌথ পরিবার। একক পরিবার মা-বাবা ও ভাই-বোন নিয়ে গঠিত হয়। এ ধরনের পরিবার ছোট হয়ে থাকে। যৌথ পরিবারে বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি ও অন্যান্য পরিজন একত্রে বাস করে। যৌথ পরিবার বড় পরিবার। বাংলাদেশে উভয় ধরনের পরিবার রয়েছে। তবে বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত যৌথ পরিবার কয়েকটি একক পরিবারের সমষ্টি।

[adToAppearHere]

গ.বৈবাহিক সূত্র :

বৈবাহিক সূত্রের ভিত্তিতে তিন ধরনের পরিবার লক্ষ করা যায়। যথা- একপতিœক, বহুপতিক ও বহুপতি পরিবার। একপতœীক পরিবারে একজন স্বামীর একজন স্ত্রী থাকে। আর বহুপতিœক পরিবারে একজন স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে। আমাদের সমাজের অধিকাংশ পরিবার একপতœীক, তবে বহুপতœীক পরিবারও কদাচিৎ দেখা যায়। বহুপতি পরিবারে একজন স্ত্রীর একাধিক স্বামী থাকে। বাংলাদেশে এ ধরনের পরিবার দেখা যায় না।

সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রিত হয়। অর্থা একদল লোক যখন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে, তখনই সমাজ গঠিত হয়। সমাজের এ ধারণাটি বিশ্লেষণ করলে এর প্রধান দু’টি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।

[adToAppearHere]

যথা- ক) বহুলোকের সংঘবদ্ধভাবে বসবাস এবং

খ) ঐ সংঘবদ্ধতার পেছনে থাকবে সাধারণ উদ্দেশ্য।

তাছাড়া সমাজের সদস্যদের মধ্যে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়- ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা, নির্ভরশীলতা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য ইত্যাদি। সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মানুষকে নিয়ে সমাজ গড়ে ওঠে। আর সমাজ মানুষের বহুমুখী প্রয়োজন মিটিয়ে উন্নত ও নিরাপদ সামাজিক জীবন দান করে। সমাজের মধ্যেই মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে।

সমাজকে সভ্য জীবনযাপনের আদর্শ স্থান মনে করে বলে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই সমাজ গড়ে তোলে। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল যথার্থই বলেছেন, মানুষ স্বভাবগত সামাজিক জীব, যে সমাজে বাস করে না, সে হয় পশু, না হয় দেবতা। ব¯তুত মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমাজে বসবাস করে এবং সামাজিক পরিবেশেই সে নিজেকে বিকশিত করে।

[৪র্থ সপ্তাহ] এসএসসি পৌরনীতি ও নাগরিকতা এসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১

[adToAppearHere]

[adToAppearHere]

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বর্ণনা:

রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের মানুষ কোনো না কোনো রাষ্ট্র্রে বসবাস করে। আমাদের এই পৃথিবীতে ছোট বড় মিলিয়ে ১৯৭ রাষ্ট্র আছে। প্রতিটি রাষ্ট্র্রেরই আছে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড এবং জনসংখ্যা। এ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আরও আছে সরকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব। মূলত এগুলো ছাড়া কোনো রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না।

[adToAppearHere]

অধ্যাপক গার্নার বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ডে ¯থায়ীভাবে বসবাসকারী, সুসংগঠিত সরকারের প্রতি স্বভাবজাতভাবে আনুগত্যশীল, বহিঃশত্রুর নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত, স্বাধীন জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে।’ এ সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে রাষ্ট্র্রেরÑ চারটি উপাদান পাওয়া যায়।

যথা- ১। জনসমষ্টি

২। নির্দিষ্ট ভূখণ্ড

৩। সরকার ও

৪। সার্বভৌমত্ব।

১. জনসমষ্টি:

[adToAppearHere]

রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য উপাদান জনসমষ্টি। কোনো ভূখণ্ডে একটি জনগোষ্ঠী স্থায়ীভাবে বসবাস করলেই রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে। তবে একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য কী পরিমাণ জনসমষ্টি প্রয়োজন, এর কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। যেমন- বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি, ভারতের জনসংখ্যা ১০০ কোটির বেশি, ব্রুনাইয়ে প্রায় দুই লক্ষ। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, একটি রাষ্ট্র্রের সম্পদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জনসংখ্যা থাকা বাঞ্ছনীয়।

২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড :

রাষ্ট্র গঠনের জন্য নির্দিষ্ট ভূখণ্ড আবশ্যক। ভূখণ্ড বলতে একটি রাষ্ট্র্রের ¯থলভাগ, জলভাগ ও আকাশসীমাকে বোঝায়। রাষ্ট্র্রের ভূখণ্ড ছোট বা বড় হতে পারে। যেমন- বাংলাদেশের ক্ষেত্রফল ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। গণচীন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি রাষ্ট্র্রের আয়তন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়।

৩. সরকার :

[adToAppearHere]

রাষ্ট্র্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরকার। সরকার ছাড়া রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। রাষ্ট্র্রের যাবতীয় কার্যাবলি সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সরকার গঠিত হয় তিনটি বিভাগ নিয়ে। যথা- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। সরকারের গঠন সকল রাষ্ট্র্রের একই রকম হলেও রাষ্টভেদে সরকারের রূপ ভিন্ন ভিন্ন।

যেমন- বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার, আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। রাষ্ট্র্রের যাতীয় শাসনকাজ সরকারই পরিচালনা করে থাকে।

৪. সার্বভৌমত্ব :

সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি রাষ্ট্র্রের চরম, পরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা। এর দু’টি দিক রয়েছে, যথা- অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্র দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ জারির মাধ্যমে ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর কর্তৃত্ব করে।

অন্যদিকে, বাহ্যিক সার্বভৌমত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্র বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে দেশকে মুক্ত রাখে। একক কাজ : পশ্চিম বঙ্গ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম রাষ্ট্র কি না যুক্তিসহ আলোচনা করবে।

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বর্ণনা:

[adToAppearHere]

রাষ্ট্র কখন ও কীভাবে উৎপত্তি লাভ করেছে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা অতীত ইতিহাস ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে রাষ্ট্র্রের উৎপত্তি সম্পর্কে কতগুলো মতবাদ প্রদান করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

১। ঐশী মতবাদ

২। বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদ

৩। সামাজিক চুক্তি মতবাদ ও

৪। ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ।

১. ঐশী মতবাদ:

[adToAppearHere]

এটি রাষ্ট্র্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সবচেয়ে পুরাতন মতবাদ। এ মতবাদে বলা হয়- বিধাতা বা স্রষ্টা স্বয়ং রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন এবং রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনি শাসক প্রেরণ করেছেন। শাসক তাঁর প্রতিনিধি এবং তিনি তার কাজের জন্য একমাত্র স্রষ্টা বা বিধাতার নিকট দায়ী, জনগণের নিকট নয়। শাসক যেহেতু স্রষ্টার নির্দেশে কাজ করে, সেহেতু শাসকের আদেশ অমান্য করার অর্থ বিধাতার নির্দেশ অমান্য করা। এ মতবাদ অনুসারে শাসক একাধারে যেমন রাষ্ট্রপ্রধান এবং অন্যদিকে তিনিই আবার ধর্মীয় প্রধান। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এ মতবাদকে বিপদজ্জনক, অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক বলে সমালোচনা করেন। তাদের মতে, যেখানে জনগণের নিকট শাসক দায়ী থাকে না, সেখানে স্বৈরশাসন সৃষ্টি হয়। এ মতবাদকে বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদও বলা হয়।

২.বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদ:

এ মতবাদের মূল বক্তব্য হলো- বল বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্র্রের উৎপত্তি হয়েছে এবং শক্তির জোরে রাষ্ট্র টিকে আছে। এ মতবাদে বলা হয়, সমাজের বলশালী ব্যক্তিরা যুদ্ধ-বিগ্রহ বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্বলের উপর নিজেদের আধিপত্য ¯থাপনের মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এবং শাসনকার্য পরিচালনা করে। এ মতবাদে আরও বলা হয়, সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এভাবেই যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে রাষ্ট্র্রের জন্ম হয়েছে। সমালোচকরা এ মতবাদকে অযৌক্তিক, ভ্রান্ত ও মারাত্মক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলেন, শক্তির মাধ্যমেই যদি রাষ্ট্র টিকে থাকত তাহলে শক্তিশালী রাষ্ট্র্রের পাশাপাশি সামরিক দিক থেকে দুর্বল রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারত না। আসলে শক্তির জোরে নয় বরং সম্মতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়ে ওঠে এবং টিকে থাকে।

৩. সামাজিক চুক্তি মতবাদ:

এ মতবাদের মূলকথা হলো- সমাজে বসবাসকারী জনগণের পারস্পরিক চুক্তির ফলে রাষ্ট্র্রের জন্ম হয়েছে। ব্রিটিশ দার্শনিক টমাস হবস্ ও জন লক এবং ফরাসি দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাক রুশো সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রবর্তক ছিলেন।

টমাস হবস্                         জন লক                           জ্যাঁ জ্যাক রুশো

[adToAppearHere]

এ মতবাদ অনুযায়ী, রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করত। তারা প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলত এবং প্রাকৃতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। কিন্তু প্রকৃতির রাজ্যে আইন অমান্য করলে শাস্তি দেয়ার কোনো কর্তৃপক্ষ ছিল না। ফলে সামাজিক জীবনে অরাজকতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। মানুষ হয়ে ওঠে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক। দুর্বলের ওপর চলে সবলের অত্যাচার। এ কারণে মানুষের জীবন কষ্টকর ও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া প্রকৃতির রাজ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যক্তিগত সম্পত্তির আকাঙ্খা ও প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রকৃতির রাজ্যের এ অরাজকতাপূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ নিজেদের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি করে এবং নিরাপত্তার বিনিময়ে নিজেদের ওপর শাসন করার জন্য ¯থায়ীভাবে শাসকের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে।

[adToAppearHere]

৪. ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ:

এ মতবাদের মূল বক্তব্য হলো- রাষ্ট্র কোনো একটি বিশেষ কারণে হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের বিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন শক্তি ও উপাদান ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে হতে রাষ্ট্র্রের উৎপত্তি হয়েছে। যেসব উপাদানের কার্যকারিতার ফলে রাষ্ট্র্রের উৎপত্তি হয়েছে, সেগুলো হলো- রক্তের বন্ধন, ধর্মের বন্ধন, যুদ্ধবিগ্রহ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চেতনা ও কার্যকলাপ। ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ সম্পর্কে ড. গার্নার বলেন, ‘রাষ্ট্র বিধাতার সৃষ্টি নয়, বল প্রয়োগের মাধ্যমেও সৃষ্টি হয়নি বরং ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের ফলে রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে।’ রাষ্ট্র্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য মতবাদ। এ মতবাদে রাষ্ট্র্রের উৎপত্তির সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আসলে

সরকারের ধারণা:

[adToAppearHere]

সরকার রাষ্ট্র গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সরকার ছাড়া রাষ্ট্র গঠিত হয় না। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে সরকার তিন ধরনের কাজ সম্পাদন করে। যথা- আইন, শাসন ও বিচার-সংক্রান্ত। এ তিন ধরনের কার্য সম্পাদনের জন্য সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। যেমন- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। আইন বিভাগ দেশের প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করে, সেই আইন প্রয়োগ করে শাসন বিভাগ সুষ্ঠুভাবে শাসন কার্য পরিচালনা করে এবং বিচার বিভাগ অপরাধীকে শাস্তি দেয় এবং নিরপরাধীকে মুক্তি দিয়ে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। অতএব সরকার বলতে সেই জনগোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা রাষ্ট্র্রের আইন প্রণয়ন, শাসন পরিচালনা ও বিচার

প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র্রে সরকার বলতে জনগণকে বোঝায়। কারণ সরকার জনগণের

প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।

রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক

প্রাচীনকালে রাষ্ট্র ও সরকারের কোনো পার্থক্য করা যেত না। ফ্রান্সের চতুর্দশ লুই বলতেন, আমিই রাষ্ট্র। আধুনিককালে

[adToAppearHere]

রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে, নিম্নে সেগুলো বর্ণিত হলো-

১. গঠনগত : জনসমষ্টি, ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্বÑএ চারটি উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়। সরকার উক্ত চারটি

      উপাদানের মধ্যে একটি অন্যতম উপাদান, যার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।

২. জনসমষ্টি : রাষ্ট্র গঠিত হয় দেশের সব জনগণ নিয়ে। আর সরকার গঠিত হয় আইন, শাসন ও বিচার বিভাগে

    নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিয়ে।

৩. স্থায়িত্ব: রাষ্ট্র স্থায়ী প্রতিষ্ঠান, কিন্তু সরকার অস্থায়ী এবং পরিবর্তনশীল। রাষ্ট্র্রের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য

    সরকার পরিবর্তিত হয়। কিন্তু রাষ্ট্র্রের পরিবর্তন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ সরকারের পরিবর্তন হয়েছে

    বহুবার, কিন্তু রাষ্ট্র্রের স্থায়িত্বের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

৪. প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য : বিশ্বের সবল রাষ্ট্র্রের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অভিন্ন। কিন্তু সরকারের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য রাষ্ট্রভেদে

    ভিন্ন ভিন্ন। যেমন- বাংলাদেশে রয়েছে সংসদীয় সরকার, আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রে রয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসিত

    সরকার।

৫. সার্বভৌমত্ব : রাষ্ট্র সার্বভৌম বা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। সরকার সার্বভৌম ক্ষমতার বাস্তবায়নকারী মাত্র।

৬. ধারণা : রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। রাষ্ট্রকে দেখা যায় না, কল্পনা বা অনুধাবন করা যায়। কিন্তু সরকার মূর্ত। কারণ, যাদের নিয়ে সরকার গঠিত হয়, তাদের দেখা যায় সুতরাং রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে উল্লিখিত পার্থক্য থাকলেও আমরা বলতে পারি, উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ । একটিকে ছাড়া অন্যটির কথা কল্পনা করা যায় না। রাষ্ট্রকে পরিচালনার জন্যই সরকার গঠিত হয় দলীয় কাজ : রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক নির্ণয় করবে।

[adToAppearHere]

আরও দেখুন…

[adToAppearHere]

চতুর্থ সপ্তাহের পৌরনীতি ও নাগররিকতা এসাইনমেন্টের আরো বিশদ ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

বিগত সপ্তাহের এসএসসি ২০২১ পৌরনীতি ও নাগরিকতা অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান