“নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল প্রশ্ন সম্পর্কে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাই পৌরনীতি।” ই. এম. হোয়াইটের এই সংজ্ঞার আলোকে পৌরনীতি ও সুশাসনের বিষয়বস্তু ও পরিধির ক্রমবিকাশ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর।

ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ই. এম. হোয়াইট এর মতে, “পৌরনীতি হলো জ্ঞানের সেই মূল্যবান শাখা, যা নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে”।

পৌরনিতি হলো নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। প্রাচীন গ্রীসে নাগরিক ও নগর রাষ্ট্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। ঐ সময় ছোট অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠত নগর-রাষ্ট্র। যারা নগর রাষ্ট্রীয় কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করত, তাদের নাগরিক বলা হত। শুধুমাত্র পুরুষ শ্রেণী রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে বিধায় কেবলমাত্র তাদেরকে নাগরিক বলা হত। দাস, মহিলা ও বিদেশিদের এ সুযোগ ছিলনা।

নাগরিকের আচরণ, দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনাই হলো পৌরনীতির বিষয়বস্তু। রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকের মর্যাদাকে বলা হয় নাগরিকতা। আর রাষ্ট্রের সাথে জড়িত সবই পৌরনীতির বিষয়বস্তু।

বর্তমানে একদিকে নাগরিকের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে, অন্যদিকে নগর-রাষ্ট্রের স্থলে বৃহৎ আকারের জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

“নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল প্রশ্ন সম্পর্কে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাই পৌরনীতি।” ই. এম. হোয়াইটের এই সংজ্ঞার আলোকে পৌরনীতি ও সুশাসনের বিষয়বস্তু ও পরিধির ক্রমবিকাশ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ

পৌরনীতি ও সুশাসন এর ধারণা ও পরিধিঃ

পৌরনীতি

পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Civics থেকে এসেছে। Civics শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ civis এবং civitas থেকে এসেছে। শব্দটির অর্থ হলো নাগরিক ও নগর রাষ্ট্র। অর্থাৎ পৌরনীতি নাগরিকতা বিষয়ক সামাজিক বিজ্ঞান। ব্যাপক অর্থে পৌরনীতি নাকোল নাগরিকতা ও রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সংক্রান্তঃ বিজ্ঞান।

EM.Write বলেন : নাগরিকতার সাথে জড়িত সব প্রশ্ন নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাকে পৌরনীতি বলে। তিনি আরো বলেন। পৌরনীতি হলো জ্ঞানের সেই শাখা যা নাগরিকতার অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয় জাতীয় ও মানবতার সাথে জড়িত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।

এক কথায় পৌরনীতি হলো সেই সাতরোজা নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি অধিকার ও কর্তব্য এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে নাগরিক জীবনের সমস্যা সমাধান ও পর্যালোচনা করে।

সুশাসনঃ

সুশাসন শব্দের প্রতিশব্দ হলো good governance. Governance একটি রকমারি ধারণা। যা গ্রিক শব্দ। kubarnaq এবং ল্যাটিন শব্দ gubarnan থেকে এসেছে। যার অর্থ জাহাজ পরিচালনা করা। Governance বা শাসন হল মূলত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্ব অর্জন, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা। আর শাসনের সাথে সু প্রত্যয় যোগে সুশাসন শব্দটির সৃষ্টি হয়।

বিশ্বব্যাংকের মতে: সুশাসন হলো এমন একটি কর্মপ্রক্রিয়া যেখানে একটি দেশের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদের ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। সুশাসনের গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন Mac Corney: তিনি বলেন সুশীল সমাজ ও রাষ্ট্র সরকার ও শাসিত জনগণ শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ককে সুশাসন বলে। মোটকথা সুশাসন হলো একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দায়িত্বশীলতা জবাবদিহিতা স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণের ওপর নির্ভরশীল। সমাজ থেকে রাষ্ট্রের প্রতিটি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে সুশাসনের পরিধি ব্যাপৃত।

সুশাসনের বৈশিষ্ট্য

সুশাসন হলো একটি গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া যেখানে রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জনগণের সকল অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়। সুশাসনের বৈশিষ্ট্য গুলো নিচে তুলে ধরা হলো। United Nation Development Programme (UNDP) টেকসই মানবিক উন্নয়ন এর রিপোর্টে সুশাসনের কতগুলো বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছে সেগুলো হল। অংশগ্রহণ আইনের শাসন স্বচ্ছতা সংবেদনশীলতা ঐক্যমত সমতা দক্ষতা জবাবদিহিতা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য।

পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশঃ

পৌরনীতি হলো নাগরিকতা ও নগররাষ্ট্রের তত্ত্ব বা বিজ্ঞান। অপরদিকে সুশাসন হলো। পৌরনীতির তক্তের সুষ্ঠু ব্যবহার। পৌরনীতির ধারণার সূত্রপাত ঘটে প্রাচীন গ্রিসে। প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রের যারা বসবাস করত তারা এই নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হতো। গ্রিসের নগর রাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণকারীরা কেবল নাগরিকের মর্যাদা পেত। সেই প্রাচীন গ্রিস থেকে পৌরনীতি ধারণা বর্তমানের রূপ লাভ করে।

অপরদিকে সুশাসনের ধারণাটি বিশ্বব্যাংক কর্তিক উদ্ভাবিত। ১৯৮৯ সালে বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষায় সুশাসন প্রত্যয়টি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয়। যখনই বিশ্বব্যাংক সুশাসনের সংজ্ঞা টি প্রকাশ করেন। বিশ্বব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী। সুশাসন হলো এমন একটি কর্মপ্রক্রিয়া যেখানে একটি দেশের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদের ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়।