বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান, বৈশিষ্ট্য ও বন্টন বিশ্লেষণ

এইচএসসি সালের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা, আপনারা আমাদের প্রকাশিত এই পোষ্টের মাধ্যমে ভূগোল তৃতীয় সপ্তাহের নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এইচএসসি 2022 সালের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত ভূগোল দ্বিতীয় পত্র এসাইনমেন্ট এর উত্তর ডাউনলোড করতে নিচের অংশ ভালভাবে পড়ুন।

এইচএসসি ভূগোল দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন দেওয়া হল।

সাইনমেন্টঃ

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান, বৈশিষ্ট্য ও বন্টন বিশ্লেষণ।

নির্দেশনাঃ

জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান।

জনসংখ্যার অভিগমনের কারণ, ধরণ ও প্রভাব।

 বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য।

জনমিতিক ট্রানজিশনাল মডেল ও বাংলাদেশ।

জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান

জনসংখ্যার পরিবর্তন বলতে কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যার আকারগত পরিবর্তনকে বুঝানো হয়ে থাকে। এই পরিবর্তন পযলোচনার মাধ্যমে জনমিতিক ভারস্যম্য নিরীক্ষণ করা যায়। এতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রগণ ও বাস্তবায়ন সহজ হয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের মুখ্য নিয়ামক হলো জন্ম, মৃত্যু এবং অভিগমন।

জন্ম ও মৃত্যুহার পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি যথাক্রমে স্থুল জন্ম এবং স্থুল মৃত্যুহার।জনসংখ্যার পরিবর্তন নির্ভর করে জন্ন ও অভিগমনের ফলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং মৃত্যু ও অভিগমনের ফলে জনসংখ্যার হ্রাসমূলক সংখ্যাত্নক পার্থক্যের উপর। জনসংখ্যা আকার প্রতিনিয়ত পরিবর্তত হচ্ছে।সাধারণত জনসংখ্যা পরিবর্তনের তিনটি নিয়ামক রয়েছে। এগুলো হলো ক.জন্মহার খ.মৃত্যুহার এবং গ. অভিবাসন।

ক.জন্মহার(Birth Rate): জনসংখ্যা পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক হলো জন্মহার ।মানুষের মরণশীলতার কারণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তা সন্তান জন্মের মধ্যমে পূরণ হয়। কোনো নির্দিষ্ট একটি বছরে প্রতি হাজার নারীর সন্তান জন্মদানের মোট সংখ্যাকে জন্মহার বলে। সাধারণত ১৫ থেকে ৪৫ বা ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়স পযন্ত নারীদের প্রয়জন ক্ষমতা থাকে। এটি নির্ণয়করা হয় নিম্নোক্তভাবে-

খ. মৃত্যুহার (Death Rate): মরণশীলতাই মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। কিন্তু জন্মহার অপেক্ষা মৃত্যুহার কম হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আর মরণশীলতা পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি স্থুল মৃত্যুহার বা Crude Birth Rate(CBR)।নির্দিষ্ট কোনো বছরে মৃত্যুবরণকারীদের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে স্থুল মৃত্যুহার পাওয়া যায়। স্থুল  মৃত্যুহার নির্ণয়ের জন্য কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে মৃতের সংখ্যা জানা থাকা প্রয়োজন। স্থুল মৃত্যুহার নির্ণয় করা হয় নিম্নোক্তভাবে-

অভিগমনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক. প্রকৃত অনুযায়ী অভিগমন এবং খ. স্থানভেদে অভিগমন।

ক. প্রকৃত অনুযায়ী অভিগমনঃ অনেক সময় মানুষ নিজের ইচ্ছায় একস্থান থেকে অন্যস্থন গমন করে থাকে। আবার অনেক সময় নিজ বাসস্থানত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তাই এ ধরনের অভিগমনকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঅবাধ অভিগমন এবং বলপূর্বক অভিগমন।

খ.স্থানভেদে অভিগমনঃ স্থানভেদে অভিগমনকে প্রধনত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।যথা- অন্তরাষ্ট্রীয় অভিগমন এবং আন্তর্জাতিক অভিগমন।

৫. বিশ্বায়নঃ অভিগমনের একটি অন্যতম কারণ বিশ্বয়ান।বিশ্বায়নের ফলে মানুষের কাছে সবকিছুই সহজ হয়েছে। মার্শাল ম্যাক লুহান পৃথিবীকে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

৬. নগরায়ন ও শিল্পায়নঃ নগরায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পেলে গ্রিামীণ এলাকা থেকে মানুষ নগরে এসে বসবাস শুরু করে। সাধরণত সুযোগ-সুবিধা অধিক থাকায় মানুষ নগরমুখী হয়ে থাকে। যা নগর এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। নগর এলাকায় ব্যবসা-ব্যণিজ্য, শিল্প-কারখানা,অফিস-আদালত প্রর্তির আধিক্য থাকায় তা সহজেই মানুষকে অভিগমনে আকৃষ্ট করে থাকে। নগর এলাকায় শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রর আশেপাশে মানুষের ঘনত্ব বেশি হয়ে থাকে এবং শ্রমজীবি মানুষের একটি বড় অংশ বস্তিতে নিম্নতর জীবনযাপন করে।

৪. অর্থনেতিক গতিশীলতাঃ অভিগমনের ফলে অভিগমনকারীর পরিবারে অর্থনেতিক গতিশীলতা দেখা যায়। যেমন- কোনো ব্যক্তি গ্রাম থেকে শহরে গমন করলেশহর থেকে গ্রামে অর্থ পেরণ অথবা বিদেশে অভিগমন কররে দেশে বসবাসরত পরিবারের জন্য অর্থ প্রেরণ করে। এতে গ্রামীণ বা শহরে পরিবারটি  অর্থনেতিকভাবে গতিশীল হয়।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্টঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাংলাদেশপরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপাত্ত অনুযায়ী ১৬ কোটি ৫৭ লাখ । এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটার প্রায় ১১১৬ জন, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট বাদে) এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৩%। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০.২:১০০। দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সী (০-২৫ বছর বয়সীরা মোট জনসংখ্যার ৬০%, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা মাত্র ৬%)। এখানকার পুরুষ ও মহিলাদের গড় আয়ু ৭২.৩ ভছর। জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮% মানুষ বাঙালি। বাকি ২% মানুষ বিহারী বংশদ্ভুত, অথবা উপজাতির সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩ টি উপজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান। 

সারণি পযলোচনা করলে দেখাযায় যে , ১৯১১ সালে থেকে ১৯৫১ সাল পযন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ছিল প্রথম পযায়ের। এ সময় জন্মও মৃত্যুহার উচ্চছিল বলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম ছিল। ১৯৫১ সালের পর থেকে ১৯৯১ সাল পযন্ত  জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার বেশি থাকায় মোট জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪৪.২ মিলিয়ন যা ১৯৯১ সালে দ্বিগুণের বেশি হয়ে  দাঁড়িয়েছে ১১১.৫ মিলিয়ন। বিশ শতকের ৬০ থেকে ৯০ এক দশকে বাংলাদেমের চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্রমাম্বয়ে উন্নত হতে থাকে । এসময় মৃত্যুহার হ্রাস পেতে থাকলেও সে তুলনায় জন্মহার হ্রাস পায়নি।

ফলে এ সময়ে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ১৯৯১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রামান্বয়ে কমতে থাকে যা ২০১১ সালে ১.৪৭% এ দাঁড়ায়। এ সময় জন্ম ও মৃত্যুহার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশ জনমিতিক ট্রানজিশন মডেলের দ্বিতীয় পযায়েরশেষ প্রান্তে এবং তৃতীয় পযায়ে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ দ্রুত আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করছে। শিল্পক্ষেত্রেও অগ্রগতি লাভ করছে এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ চিকিৎসা ক্ষেত্র্রও অনেক দূর এগিয়েছে মৃত্যুহার কমছে। মানুষের মধ্যে জন্মহার নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা শুরু হয়েছে এবং গড় আয়ু বেড়েছে। এতে জন্ম ও মৃত্যুহার মুখী হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ দ্রুতই জনমিতিক ট্রানজিশন মডেলের তৃতীয় পযায়ের অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।