৭ম শ্রেণির ২য় সপ্তাহের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের এ্যাসাইনমেন্ট । দ্বিতীয় সপ্তাহে ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয় থেকেও এ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এটি তোমাদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ১ম অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে।
শ্রেণি: ৭ম, বিষয়: বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, এ্যাসাইনমেন্ট নং-০১
এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ:
ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলি ধারাবাহিকভাবে লেখা হলো-
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন।
মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও, বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে, এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।
পাকিস্তানের ছিল দুইটি অংশ: পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা।
পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
কার্যত পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে।
ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলি
আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
আমাদের বিদ্যালয়ের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যেভাবে পালন করা হয়েছিল তার একটি পর্যায় ক্রমিক বর্ণনা দেয়া হলো-
‘মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে ‘ক’ উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নির্দেশনায় বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়।
প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয় সকাল ৭ ঘটিকায় প্রভাতফেরির মাধ্যমে।
খুব ভোর থেকেই বিদ্যালয়ের আশপাশের ছাত্রছাত্রীরা খালি পায়ে বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে সমবেত হয়।
তাদের সঙ্গে যোগদান করেন শিক্ষকরাও।
বিদ্যালয় মাঠের পূর্ব প্রান্তে শহীদ মিনারে ফুলের তোড়া প্রদানের জন্য প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের খালি পায়ে শোভাযাত্রা শুরু হয়।
সে সময় সবার কণ্ঠে অনুরণিত হয় একুশে ফেব্রুয়ারির অমর গান : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’
ধীর পদক্ষেপে অগ্রসরমান শোভাযাত্রাটি এক ভাবগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
শহীদ মিনারের পাদদেশে মিছিল উপনীত হলে প্রধান শিক্ষক মহোদয় প্রথমে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ফুলের তোড়া শহীদ মিনারে অর্পণ করে।
ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর শহীদ মিনারের সামনের সবুজ ঘাসের গালিচার ওপর আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রথমে বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবিদের কবিতা থেকে নির্বাচিত কবিতাবলি আবৃত্তি করে শিক্ষার্থীরা।
পরে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষকরা।
আবৃত্তি শেষে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিল্পীরা।
দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান শিক্ষকের সভাপতিত্বে বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক ও দুজন শিক্ষার্থী ‘মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর ওপর আলোচনা করে।
সব শেষে ছিল পুরস্কার বিতরণী পর্ব।
আবৃত্তি ও আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে প্রধান শিক্ষক মহোদয় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদ্যাপিত মহান একুশের অনুষ্ঠানমালায় শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে অংশগ্রহণ করে।
মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনা যে বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তা বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হিসেবে ধরা দেয় এ অনুষ্ঠানে।
তোমাদের বিদ্যালয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কীভাবে পালন করা হয়েছিল তার একটি পর্যায়ক্রমিক বর্ণনা দাও
উত্তর:
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির চির প্রেরণা ও অবিস্মরণীয় একটি দিন। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন এটি সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর এই দিনটি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ।
সেদিন মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত ও সফিউররা। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার প্রথম নজির এটি। সেদিন তাদের রক্তের বিনিময়ে শৃঙ্খলযুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা ও মায়ের ভাষা। আর এর মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল তা মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে সবার কণ্ঠে বাজে একুশের অমর শোকসঙ্গীত –
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি