মানুষ যখন একত্রিত হয়, মেলামেশা করে এবং কোন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগঠিত হয় তখন তাকে সমাজ বলে।সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস বলেন, “সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ মানবগোষ্ঠীকে বুঝায় যারা কোন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মিলিত হয়েছে।” মনের ভাব প্রকাশের জন্য এবং আদান-প্রদানের সহজাত প্রবৃত্তির বশে মানুষ একত্রে বসবাস করতে শিখেছে। গিডিংসের ভাষায় একত্রিত হওয়ার মূল কারণ হল “সাধারণ চেতনাবোধ”। মানুষ এই চেতনাবোধ থেকে ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে পরিবার, সংঘ, সম্প্রদায় প্রভৃতি গঠন করেছে। এরূপ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়ে উঠেছে সমাজ। ম্যাকাইভার বলেন, “সমাজ মানুষের বহুবিধ সম্পর্কের এক বিচিত্র রূপ।” সমাজ একটা অমূর্ত ধারণা।
সমাজের কোন নির্দিষ্ট সীমানা নেই। সমাজ ছোট হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। এমনকি বিশ্বব্যাপীও হতে পারে। যেমন, রেডক্রস সমাজ। অধ্যাপক লিক্ক বলেন, “সমাজের সঙ্গে ভূখণ্ডের সম্পর্ক নেই”। সমাজ রাজনৈতিক সংগঠন না হলেও সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠে এবং সমাজ তাকে লালন করে। ম্যাকাইভার তার সমাজ নামক গ্রন্থে সমাজের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের একটি জটিল জাল যার মধ্যে আমরা বাস করি।” সংস্কৃতির ধারণা: সংস্কৃতির ধারণাটি বর্তমান সময়ে পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ রূপে প্রতিভাত হয়েছে|
আমাদের সংস্কৃতির মাধ্যমেই আমরা পূর্ব-পুরুষদের সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আহরণ করে থাকি| সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হল কোন ইতিহাস বইয়ের মতো, যা সকলের গুরুত্ব সহকারে পাঠ করা উচিত| মানব জীবন নশ্বর হলো এর সাংস্কৃতিক দিকগুলি অমর| পূর্ব পুরুষদের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গুণাবলী পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও আপন নিয়মে পরিবাহিত হয়| যখন আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক উৎস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করি এবং যেগুলিকে অনুসরণ করি, তা আমাদের নিজেদের জানতে অনেক বেশি সাহায্য করে|
আত্মউপলব্ধির মাধ্যমে আমরা জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের উৎস ও গুণাবলী গুলির মধ্যে আরও বেশি মাত্রায় সংযোগ স্থাপন করতে পারি| এইভাবে সাংস্কৃতিক অভ্যাস সমূহের মধ্য দিয়ে আমাদের আত্ম সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, পাশাপাশি নিজস্ব সংস্কৃতির ধারক ও বাহক রূপে আমাদের মধ্যে গর্ব অনুভূত হয়।
সহজসরল জীবনযাপন: এ রচনার বর্ণনায় সে অঞ্চলের মানুষের সহজসরল জীবনযাত্রার পরিচয় ফুটে উঠেছে। সেখানকার মানুষ আড্ডাবাজ স্বভাবের । লেখকের বর্ণনায় কাবুলে এরই নাম কাজ।
তাছাড়া তারা বেশ দায়িত্বশীল ও অনুগত হয়। তাইতাে আবদুর রহমানকে রচনার পুরােভাগ জুড়ে একজন নিষ্ঠাবান কর্মীর ভূমিকায় দেখতে পাই আমরা। এছাড়া আবদুর রহমানের জন্মস্থান পানশিরের দীর্ঘ বর্ণনার মধ্য দিয়ে তার দেশপ্রেমের পরিচয়ও সেখানে ফুটে উঠেছে।
প্রবাস বন্ধু’ অবলম্বনে আফগানিস্তানের সমাজ ও সংস্কৃতির পরিচয় দিতে হবে।
১) প্রকৃতি ও পরিবেশ: লেখক আফগানিস্তান ভ্রমণকালে কাবুল শহর থেকে আড়াই মাই । দূরের খাজামােল্লা গ্রামে বাসা নেন। গ্রামটির পাশেই রয়েছে পাগমানের পাহাড়। শীতকালে পাহাড়ের গায়ের বরফ নিচে গর্ত খুঁড়ে তাতে ভর্তি করে রাখা হয়। গরমকালে প্রয়ােজন মতাে সেখান থেকে তা বের করা হয়।
কাবুল শহরের পাশ দিয়েই একটি নদী বয়ে গেছে। নদীটির নাম লব-ই-দরিয়া। লেখকের দেখাশােনার দায়িত্বে থাকা আবদুর রহমানের বাড়ি উত্তর আফগানিস্তানের পানশির এলাকায়। সেখানে শীতকালে টানা কয়েকদিন ধরে তুষারপাত হয়। সেখানকার মানুষের চেহারায়ও তীব্র শীতের ছাপ স্পষ্ট। সবমিলে আফগানিস্তানের প্রস্তরভূমি ও বরফশীতল জলবায়ু আকর্ষণীয়।
২) খাদ্যাভ্যাসের ধরন: এ রচনায় লেখক আফগানদের ভােজনবিলাসের দিকটি অত্যন্ত সুন্দর ও হাস্যরসাত্মকভাবে তুলে ধরেছেন। বাসা নেওয়ার প্রথমদিন । লেখকের জন্য রান্নার আয়ােজনের যে বর্ণনা আমরা পাই তাসত্যিই অবাক হওয়ার মতাে।
গামলা ভর্তি কোরমা, শামী কাবাব, ঝুড়ি ভর্তি কোফতা-পােলাও, মুরগির রােস্টসহ আরও নানা আয়ােজনের যে বর্ণনা রয়েছে সেখানে গড়পরতা বাঙালিদের খাবারের পরিমাণের তুলনায় অনেক বেশি। তাছাড়া সেখানকার চায়ের রং সবুজ। পেয়ালায় ঢাললে তা ফিকে হলদে রঙের মনে হয়। কাবুলের অধিবাসীরা ছােটো সাইজের পেয়ালায় একসঙ্গে পাঁচ-ছয় কাপ চা খায়।
বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের সমাজ ও সংস্কৃতির তুলনা করতে হবে।
![](https://i0.wp.com/bdexamhelp.com/wp-content/uploads/2022/02/11-1.png?resize=1110%2C624&quality=95&strip=all&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/bdexamhelp.com/wp-content/uploads/2022/02/22.png?resize=1110%2C624&quality=95&strip=all&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/bdexamhelp.com/wp-content/uploads/2022/02/33.png?resize=1110%2C624&quality=95&strip=all&ssl=1)
প্রবাস বন্ধু’ রচনায় লেখকের যে রসবােধের পরিচয় পাওয়া যায়, তা লিখতে হবে।
১) ‘তোমার বন্ধুটার সত্র তামার তনুটা মিলিয়ে দেখাে দিখিনি। আফগানিস্তানে লেখকের সেবক আবদুর রহমানকে তার বিশাল দেহের সাথে লেখকের ক্ষীণ দেহ মিলিয়ে দেখার প্রসঙ্গে আলােচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
২) রাত দুটোয় খাবার জুটলেও জুটতে পারে। আবদুর রহমানের রান্নার আয়ােজন দেখে লেখক মনে করেছিলেন রান্না করতে অনেক রাত হয়ে যাবে। তাই তিনি রসিকতা করে একথা বলেছেন।
৩) কার গোয়াল,কে দেয় ধুয়ে চাকর আবদুর রহমান খাওয়াতে পেরে আনন্দিত— সে অবস্থায় তাকে খেতে বলা অর্থহীন— এ প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে।
৪) তোমার খুশির জন্য নয়, আমার প্রাণ বাঁচানোর জন্য। আবদুর রহমান লেখককে পানশিরের বরফ পতনের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়ে বলে সাতদিন জানালার ধারে বসে থেকে শুধু এর সৌন্দর্য দেখে কাটানাে যায়। তাই লেখক পানশিরে যেতে চাইলে আবদুর রহমান অনেক খুশি হয়।
এতে আবদুর রহমান খুশি হলে লেখক মজা করে বলেন, তিনি পানশিরে যাবেন আবদুর রহমানের খুশির জন্য নয়, বরং নিজের প্রাণ বাঁচানাের জন্য। কেননা, আবদুর রাহমান। | যদি পানশিরে বসে থাকেন তবে লেখকের রান্না করার মানুষ থাকবে না ।