পরিবেশ বাঁচলে বাঁচবে পৃথিবী – অনধিক ৩০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রতিবেদন লেখ

পরিবেশ মানুষের পরম বন্ধু। পরিবেশ মানুষকে মমতা দিয়ে আগলে রাখে। তবে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় আমরা আমাদের পরম বন্ধুকে নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের লোভের বশবর্তী হয়ে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত করছি।

আমাদের এই হীন কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ু, পানি, মাটি নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। ফলে পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশকে আশ্রয় করেই গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। বলতে দ্বিধা নেই বিশ্ব সভ্যতার যতই উন্নতি হচ্ছে ততই প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ব যতই আধুনিকায়ন হচ্ছে ততই প্রকৃতি তার নিজস্বতা হারাচ্ছে।

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের যে সাম্যাবস্তা দীর্ঘদিন ধরে চলে এসেছে তার বিঘ্ন ঘটিয়ে বেপরোয়াভাবে পরিবেশ দূষণ করে চলেছি, নির্বিচারে প্রকৃতি সংহার এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের মধ্য দিয়ে আমরা আজ ডেকে আনছি ক্ষয় ও অবক্ষয়ের মহামারি।

আমরা নির্বিচারে বন উজাড় করছি, কাটছি গাছ। ধ্বংস করছি অরণ্য। সেই সঙ্গে পশুপাখি শিকার করছি। আমরা দিনদিন হিংস্র হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে বড় করতে গ্রাস করছি পরিবেশের এক-একটি বস্তু।

কি বায়ু দূষণ, কি পানি দূষণ, কি শব্দ দূষণ, মাটি দূষণ, বৃক্ষনিধন, পানিতে আর্সেনিক, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্লাস্টিকসামগ্রী ইত্যকার বিষয়গুলোর জন্যে মানুষ আজ হুমকিতে পড়েছে।

পরিবেশের উপাদান :

কোন জীবের চারপাশের সকল জীব ও জড় উপাদান এর সর্বসমেত প্রভাব ও সংগঠিত ঘটনা হলো ওই জীবের পরিবেশ।

পরিবেশ বিজ্ঞানের মতে জীব সম্প্রদায়ের পারিপার্শ্বিক জৈব ও প্রাকৃতিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।

পার্ক বলেছেন , পরিবেশ বলতে স্থান ও কালের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে মানুষকে ঘিরে থাকা সকল অবস্থার যোগফলকে বোঝায়। স্থান ও কালের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশও পরিবর্তিত হয়।

পরিবেশের উপাদান দুই প্রকার। যেমন-

  • জড় উপাদান এবং
  • জীব উপাদান।

যাদের জীবন আছে , যারা খাবার খায় , যাদের বৃদ্ধি আছে , জন্ম আছে , মৃত্যু আছে তাদের বলে জীব। গাছপালা ,পশুপাখি , কীটপতঙ্গ , মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হল জীব।

এরা পরিবেশের উপাদান। জীবদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জীব পরিবেশ। মাটি, পানি , বায়ু , পাহাড়-পর্বত , নদী , সাগর , আলো , উষ্ণতা হলো পরিবেশের জড় উপাদান । এই জড় উপাদান নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জড় পরিবেশ।

পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের ভূমিকা :

পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

মানুষসহ সব প্রাণের অস্তিত্ব পরিবেশের উপরই নির্ভরশীল। কারণ পরিবেশই প্রাণের ধারক ও বাহক। তাই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে হুমকি।

মানুষ যেমন তার প্রয়োজনে পরিবেশকে নিজের উপযোগী করছে; ঠিক তেমনি সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সাথে সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিতে মানুষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে প্রাণের অস্তিত্ব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত পরিকল্পনা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।

তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণ করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ পরিবেশ সংকটের এই দায় সমগ্র মানব জাতির।

ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পৃথিবীতে সুস্থভাবে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিবেশ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গাছ সবচেয়ে বেশি জরুরি। অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ ও বনজ সম্পদকে রক্ষা করে বায়ু দূষণের মাত্রাকে কমানো সম্ভব।

বাস্তুতন্ত্রের যে সব জীব পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, তাদের টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

পরিবেশ সংরক্ষণের কয়েকটি উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • পরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও কলকারখানা নির্মাণ করা।
  • কলকারখানার বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া।
  • প্লাস্টিক ও পলিথিন যেখানে সেখানে না ফেলা।
  • মৃত জীবজন্তু ও জৈব আবর্জনা মাটি চাপা দিয়ে রাখা।
  • বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ ও রাস্তার পাশে গাছ লাগানো।

উপসংহার :

সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে মানুষ নিজেদের সুবিধার্থে তৈরি করছে নানারকম প্রযুক্তি, বাড়ছে ক্রমবর্ধমান হারে শক্তি উৎপাদনের চাহিদা যার থেকে নির্গত পদার্থ মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দূষণে অগ্রণি ভূমিকা পালন করে চলেছে।

কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে বায়ু দূষণে প্রাণীর বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। অধিক নগরায়ন, যানবাহন বৃদ্ধির প্রভাবে পরিবেশ তার বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।

মানুষ শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিভর্রযোগ্য, দক্ষ ও স্বাথের্র দ্বন্‌দ্ব নয়্ত এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেকোনো অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনসংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নসাপেক্ষে অনুমোদন করতে হবে।

পরিবেশ, পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম-প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বিশেষত জনগণের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।