যুক্তিবিদ্যার ধারণায় এর পরিধি পাওয়া যায়- পর্যালোচনা কর

যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তের উন্নয়ন বিষয়ক চর্চার সাথে জড়িত|আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তিবিদ্যার উন্নতি হয় ভারত,চীন এবং গ্রীস-এ আদিযুগে|গ্রিক পদ্ধতি যা মূলত এরিষ্টটটেলীয় যুক্তিবিদ্যা(বা শর্তাধীন যুক্তিবিদ্যা) তা একটি এমন পদ্ধতি যার সুদূরপ্রসারী ব্যবহার ও গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায় পশ্চিমা বিজ্ঞান এবং গণিতে সহস্র বছর যাবৎ

স্টোইকস্,বিশেষত চাইরাসিপাস প্রমূখ বিধেয় যুক্তিবিদ্যার উন্নয়ন শুরু করেন| খ্রিষ্টীয় এবং ইসলামীয় দার্শনিকগণ যেমন বইথিয়াম(মৃত্যু ৫২৪ অব্দ) এবং উইলিয়াম অব ওকহেম(মৃত্যু ১৩৪৭ অব্দ) মধ্যযুগে আরিষ্টটটেলীয় যুক্তিবিদ্যার প্রভূত উন্নয়ন করেন যা ১৪-শতকের মাঝথানে উচ্চ অবস্থানে পৌঁছে যায়|

১৪-শতকের এর মাঝ থেকে ১৯-শতকের প্রারম্ভ পর্যন্ত সময়কালে যুক্তিবিদ্যাকে বহুলভাবে অগ্রাহ্য করা হয় যার জন্য একে একজন ইতিহাসবিদ বন্ধ্যা সময়কাল হিসেবে আখ্যা দেন| সাম্রাজ্যীয় প্রথাই তখন চলত যার তথ্যসূত্র পাওয়া যায় ১৬২০ সালে স্যার ফ্রান্সিস ব্যারন-এর নোভাস অরগানন থেকে|

যুক্তিবিদ্যা ১৯-শতকের মাঝামাঝি সময়ে যাকে পরিবর্তনের সময়কাল বলা হয় তথন আনুষ্ঠানিক ও কঠোর শৃঙ্খলায় উন্নীত হতে থাকে যার আদর্শ হলো গাণিতিক প্রমাণ-এর সঠিক পদ্ধতি যা গণিতে ব্যবহৃত হয়|এটি যেন একটি নব্য সুর যা গ্রিক পদ্ধতির দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে নিয়ে যায়|আধুনিক যতিচিহ্নিক বা গাণিতিক যুক্তিবিদ্যার এই সময়কার উন্নয়ন বস্তুত মানবসভ্যতার প্রজ্ঞাব্যাঞ্জক ইতিহাস-এর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যাতে অবদান রাথেন বোলি,ফ্রিজ্,রাসেল এবং পিয়ান্ও|

যুক্তিবিদ্যার পরিসর

১।চিন্তা. ২।যুক্তি. ৩।জ্ঞান. ৪।অনুমান. ৫।যুক্তির বৈধতা

যুক্তিবিদ্যা এমন একটি বিজ্ঞান যা অনুমান বা বিমূর্ত চিন্তাকে ভাষায় প্রকাশের মাধ্যমে এর সত্যতা যাচাই করে। অন্যদিকে গণিত হল সংখ্যা, প্রতীক, বিভিন্ন মাত্রিক আকার, বিমূর্ত ধারণা অবকাঠামো ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, গতি এবং কালের বিজ্ঞান। অর্থাৎ গণিত ও যুক্তিবিদ্যা উভয়ই বিমূর্ত ধারণা ও চিন্তন নিয়ে কাজ করে।

যুক্তিবিদ্যা ও গণিত উভয়ই আকারগত বিজ্ঞান,বস্তুগত বিজ্ঞান নয়। কারণ যুক্তিবিদ্যা ও গণিত কোনো বস্তু নিয়ে কাজ করে না। পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, রসায়ন যেমন জড় বা প্রাণ নিয়ে কাজ করে যুক্তিবিদ্যা ও গণিত সে ধরনের জড়বস্তু বা প্রাণ নিয়ে কাজ করে না বরং উভয়ই চিন্তা বা সংখ্যার বিভিন্ন আকার বা রূপ নিয়ে কাজ করে। এই অর্থে যুক্তিবিদ্যা ও গণিত সাদৃশ্যপূর্ণ।

আধুনিক যুক্তিবিদ্যায় বিভিন্ন প্রতীক ও সংকেত ব্যবহার করা হয়; প্রাচীন যুগে এর ব্যবহার ছিল খূব সীমিত বর্তমানে তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে গণিতেও রয়েছে প্রতীকের ব্যবহার। প্রতীকের ব্যবহার ছাড়া যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ অংকও করা যায় না এই দৃষ্টিকোণ থেকেও যুক্তিবিদ্যা ও গণিত সাদৃশ্যপূর্ণ।

যুক্তিবিদ্যার আরোহ ও অবরোহ নিয়ম ছাড়া গণিতের হিসাব করা সম্ভব নয়। এটা যুক্তিবিদ্যার নির্ভরশীলতার প্রমাণ দেয়। জ্যামিতির বিভিন্ন উপপাদ্যে গাণিতিক আরোহ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যা যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়ম।

যুক্তিবিদ্যা যেহেতু সব বিজ্ঞানের মৌলিক নীতিমালা সরবরাহ করে, তাই কম্পিউটার বিজ্ঞানের মৌলিক নীতিমালাও যুক্তিবিদ্যায় রয়েছে। যুক্তিবিদ্যার চর্চার জন্য যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না; কিন্তু কম্পিউটার নিজেই একটি যন্ত্র এবং যান্ত্রিকভাবেই এখানে যুক্তির সঠিকতা খুব সহজে যাচাই করা যায়। তাই বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের কাজও একই প্রকৃতির—শুধু পার্থক্য যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে।

কম্পিউটার মূলত গাণিতিক হিসাবনিকাশের জন্য প্রথম তৈরি হয়। আর গণিতের নিয়মাবলি একান্তভাবে যুক্তিবিদ্যার আরোহ ও অবরোহ নীতির ওপর নির্ভরশীল। এভাবে গণিতের সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে কম্পিউটার যুক্তিবিদ্যার সঙ্গেও সম্পর্কিত।

এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা এসাইনমেন্ট উত্তর ১ম সপ্তাহ