গ্রামীণ ও শহর সমাজে পরিবারের পরিবর্তনশীল ভূমিকা

পরিবার হলো একটি প্রাচীনতম সংগঠন। পিতামাতা যৌন সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে এই সংগঠন গঠন করে, এবং সন্তান সন্তানাদি উৎপাদন ও লালন পালনের মাধ্যমে তার অস্তিত্ব ধরে রাখে। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার মতে, যৌন সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে সন্তান-সন্ততির জন্মদান এবং লালন-পালনের উদ্দেশ্যে যে সংগঠন গড়ে ওঠে তাকে পরিবার বলে। encyclopedia americana গ্রন্থে বলা হয়েছে, পরিবার পথটি সাধারণত কিছু ব্যক্তির সমষ্টিকে বোঝায়, যারা জন্ম এবং বিবাহসূত্রে একইক আবাসগৃহে বসবাস করে। সাধারণত দেখা যায়, পরিবার পথটি পূর্বপুরুষের ধারণা পর্যন্ত গ্রহণ করে।

পরিবারের প্রকারভেদ: সামাজিক ও নৃবিজ্ঞানীরা যেসব উপাদানের ভিত্তিতে পরিবারকে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন সেগুলো হলো:

১। বিবাহ ভিত্তিক পরিবার: বিবাহের ধরণ অনুযায়ী পরিবার তিন প্রকার। যথা:

(ক) একক বিবাহ ভিত্তিক পরিবার

একক বিবাহ ভিত্তিক পরিবার এমন এক ধরণের পরিবার, যেখানে একজন পুরুষ একজন স্ত্রীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এবং তাদের সংসার কিংবা দাপত্য জীবনে তৃতীয় কোন নারী কিংবা পুরুষ অনুপস্হিত থাকে।

(খ) বহুস্ত্রী বিবাহ ভিত্তিক পরিবার।

যে পরিবারে একজন পুরুষ একাধিক নারী কে ঘর সংসার করার জন্য বিবাহ করে তাকে বহু বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে। আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে বহুবিবাহ ভিত্তিক পরিবার হাতেগুনা কয়েকটি পাওয়া যেতে পারে। বহু বিবাহ ভিত্তিক পরিবার সাধারণত আদিবাসী, উপজাতিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আফ্রিকা মহাদেশে বিভিন্ন উপজাতিদের মধ্যে এখনো বেশি মাত্রায় বহু বিবাহ প্রচলন আছে। মধ্যপ্রাচ্যে ধনী শেখদের বহু বিবাহ করা বিলাসিতা মনে করা হয়।ইসলাম ধর্মে শর্ত সাপেক্ষে বহু বিবাহ করা যায়েজ। রাষ্ট্রীয় আইনেও বহু বিবাহ স্বীকৃত, তবে আইনি কতগুলো শর্ত পূরণ করতে হয়।

(গ) বহু স্বামী বিবাহ ভিত্তিক পরিবার।

যে পরিবারে একজন নারী একাধিক পুরুষকে বিবাহ করার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে এবং একই সাথে সকলের সাথে বসবাস করতে পারে কিংবা পর্যায়ক্রমে তাদের সাথে আলাদা আলাদা থাকতে পারে তাকে বহুস্বামী বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে।
এই ব্যবস্হা কিছু উপজাতি বা আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত আছে। আমাদের দেশে, ধর্মে এবং সমাজে বহু স্বামী  বিবাহভিত্তিক পরিবার গঠন করা নিন্দনীয়।

২। বংশানুক্রম এর ভিত্তিতে পরিবার: বংশানুক্রমে ভিত্তিতে পরিবারকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

(ক) পিতা দিক থেকে বা পিতৃসূত্রীয় পরিবার: পিতমসূত্রীয় পরিবারে পিতার দিক হতে ক্রমধারা অনুসারে বংশানুক্রমের ধারা ঠিক থাকে। এটি একটি বহুল প্রচলিত ব্যবস্হা। যা সমাজে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে। এ ধরনের পরিবারের সদস্যরা পিতার পরিচয়ে বড় হন। যেখানে মাতৃ পরিচয় থাকে উহ্য। অধুনা উন্নত বিশ্বসহ আমাদের দেশে মাতৃসূত্রীয় কিংবা মাতৃ পরিচয় আইনগত স্বীকৃতি পেয়েছে।

(খ) মাত্র সূত্রীয় পরিবার: মাত্র সূত্রীয় পরিবারে মাতা পরিবারের একক কতৃত্ব লাভ করেন। যেখানে পরিবারের অন্য সদস্যরা মায়ের পরিচয়ে বড় হন। মাতার পরিচয় কে বংশানুক্রমিক মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এধরনের পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তিগত অধিকার তার মায়ের সাথে সম্পর্কের উপর নির্ভর করে।

(গ) উভয় সূত্রীয় পরিবার: যখন একটি বংশের ধারা মাতার দিক হতে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু পিতা অন্য বংশানুক্রম বিবেচিত হয়ে তার বংশানুক্রম ধারা ঠিক রাখেন তাকে উভসূত্রীয় পরিবার বলে।

(ঘ) দ্বিমাত্রিক পরিবার: যদি একজন ব্যক্তিকে মাতাপিতা উভয়ের বংশানুক্রমে ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয় তাকে দ্বিমাত্রিক পরিবার বলে।

(৩) বাসস্থান ভিত্তিতে পরিবার: বাসস্থানের ভিত্তিতে পরিবারকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় যথা :

(ক) পিতৃস্থানীয় পরিবার: যে পরিবার ব্যবস্হায় স্ত্রী তার স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে তাকে পিতৃস্হানীয় পরিবার বলে।

(খ) মাতৃস্হানীয় পরিবার: যে পরিবার ব্যবস্হায় স্বামী তার স্ত্রীর গৃহে বসবাস করে তাকে মাতৃস্হানীয় পরিবার বলে। আঞ্চলিক ভাষায় তাকে “ঘর জামাই” বলা হয়।

(গ) দ্বৈত আবাসস্থল পরিবার: যখন স্বামী তার নিজ স্ত্রীর পিতামাতার বাড়ির নিকট কিংবা স্ত্রী তার নিজ স্বামীর পিতামাতার বাড়ির নিকট বসবাস করে তখন তাকে দ্বৈত আবাসস্হান পরিবার বলে।

(ঘ) এই ব্যবস্হায় স্বামী তার নিজ স্ত্রীর ভাইয়ের বাড়ির নিকট বসবাস করে।

পরিবারের বৈশিষ্ট্যাবলী উপস্থাপন করতে হবে:

অধ্যাপক আর এম ম্যাকাইভারের সংজ্ঞা বিশে−ষণ করলে আমরা পরিবারের নিুলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই :

(ক) পরিবার একটি ক্ষুদ্র বর্গ− পরিবার একটি ক্ষুদ্র বর্গ। আত্মীয়তার ঘনিষ্ঠ বন্ধনের উপর পরিবার প্রতিষ্ঠিত বলে এর আকৃতি বড় হয় না।

(খ) জৈবিক সম্পর্ক− পরিবার যৌন সম্পর্ক ও বৈবাহিক বন্ধনের উপর প্রতিষ্ঠিত।

(গ) রক্ত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক− রক্তের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের উপর পরিবার প্রতিষ্ঠিত।

(ঘ) নৈতিক মূল্যবোধ− স্নেহ, মায়া, ভালবাসা, ভক্তি, শ্রদ্ধাবোধ প্রভৃতি নৈতিক গুণাবলীর উপর পরিবার প্রতিষ্ঠিত।

(ঙ) বয়োজ্যেষ্ঠের প্রাধান্য− পরিবারে সাধারণত উপার্জনকারী একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির প্রাধান্য থাকে।

(চ) নামকরণ− পরিবার সাধারণত একটি নাম বা পদবী দ্বারা পরিচিত হয়। যেমন− কাজী, পাল, ঘোষ ইত্যাদি। কোন কোন ক্ষেত্রে এই নামকরণ ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

(ছ) সামাজিক একক− পরিবার সামাজিক একক এবং বহু পরিবারের সমন্বয়ে সমাজ গঠিত হয়।

(জ) শাশ্বত− পরিবার স্থায়ী ও চিরন্তন প্রতিষ্ঠান। অতীতে পরিবার ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

এইচএসসি 2022 এসাইনমেন্ট [সপ্তাহ-১১] প্রশ্ন ও সমাধান – সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র