ইসলামপূর্ব যুগে আরব জীবনযাত্রা রাজনৈতিক সামাজিক ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন

ইসলামপূর্ব যুগে আরব জীবনযাত্রা রাজনৈতিক সামাজিক ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন। প্রাক ইসলামী যুগের জীবনযাত্রা বর্ণনা। প্রাক ইসলামী যুগের অর্থ সামাজিক অবস্থার বিবরণ। প্রাক ইসলামী যুগের রাজনৈতিক অবস্থা চিহ্নিতকরণ। প্রাক ইসলামী যুগের সাংস্কৃতিক অবস্থা পর্যালোচনা করা প্রাক ইসলামী যুগে। উৎকৃষ্ট গুণাবলী ও দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করা।

এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উপদ্বীপ আরব ভূখন্ড হচ্ছে ইসলামের লীলাভূমি। জাজিরাতুল আরব নামে সুপরিচিতি এই ভূখন্ডটি তিন দিকে পানি এবং একদিকে মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত । এটির উত্তরে সিরিয়া মরুভূমি, পূর্বে পারশ্য উপসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর অবস্থিত । ভৌগোলিকভাবে আরব ভূমি ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার সঙ্গমস্থলে অবস্থিত । অষ্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা মাহদেশ আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে এটি পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল বলে পরিচিত হত।

সামাজিক অবস্থা : প্রাক-ইসলামী আরবকে সাধারণভাবে আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ বলা হয়। কারণ আরবে এই যুগে কোন প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ কিংবা ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনা কিছুই ছিল না। প্রাক ইসলামী যুগে আরবের সামাজিক জীবন পাপাচার, কুসংস্কার, অরাজকতা ও নিন্দনীয় কার‌্যকলাপে কুলষিত ও অভিশপ্ত হয়ে পড়েছিল।

গোত্রই ছিল আরবদের সমাজ জীবনের মূলিভিত্তি। আর গোত্র পতিদের বলা হত শেখ। এই যুগ আরবে বংশগত ও গোত্রগত প্রথার প্রভাব চরমভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। যার ফলে এই বংশ মর‌্যাদা নিয়ে এক গোত্র অন্য গোত্রের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের চোখে থাকাতো। অরাজকতাপূর্ণ আরব দেশে নারীর কোন সামাজিক মর‌্যদা ছিল না। তারা অস্থাবর ও ভোগ বিলাসের সামগ্রীরুপে হণ্য হত ।  নারীদের গৃহপালিত পশুর মত ব্যবহার করা হত। অভিজাতবর্গ দ্রুতগামী ঘোড়ার লেজের সাথে জীবন্ত নারীকে বেধে খেলাচ্ছলে টেনে টেনে নিয়ে যেত এবং এর ফলে নারীর মৃত্যু ঘটত।

প্রাচীনকাল থেকে আরব সমাজে দাস প্রথার প্রচলন ছিল। তাদের সামাজিক অধিকার অথবা ব্যাক্তি স্বাধীনতা ছিল না। পণ্য দ্রব্যের মত দাস-দাসীদের বাজারে বিক্রি করা হত। প্রাক ইসলামী যুগের সমাজ জীবনে সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য ছিল সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া কন্যা-সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। তারা কন্যা সন্তানের জন্মকে অভিশপ্ত ও লজ্জাস্কর মনে করতো। অথচ তখনকার বর্বর আরবরা ভুলে গিয়েছিল যে, তারাও কোন না কোন নারীর গর্ভের সন্তান।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তাই বলেন, দারিদ্র্যের ভয়ে নিজেদের সন্তান হত্যা কোরো না। আমি তাদেরও রিজিক দেব এবং তোমাদেরও। অবশ্যই তাদের হত্যা করা মহাপাপ। (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩১)

জুয়াখেলা, মদ্যপান, নারী অপহরণ, অনাচার, ব্যভিচার প্রভৃতি তৎকালীন আরব সমাজকে কলুষিত করে। জুয়া খেলার নেশায় আরবরা জ্ঞানশূণ্য হয়ে সময় সময় নিজেদের স্ত্রী ও কন্যাগণকেও বাজি ধরতো। মদ্যপানে মাতাল হয়ে তারা লুট-পাট, মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, রাহাজানি ইত্যাদি করতো। আর যারা এই সব খারাপ কাজে পারদর্শিতা দেখাতে পারতো, সমাজে তাদের উচ্চস্থান দেওয়া হত। এই যুগে খ্রিস্টানগণ একচেটিয়া মদের ব্যবসা এবং ইহুদীরা সুদ ও কৃতদাসের ব্যবসায় লিপ্ত  ছিল।

HSC-2022 ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র [১২শ সপ্তাহ] এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও সমাধান

সাংস্কৃতিক অবস্থা: সামাজিক জীবনে আরবরা উন্নতামানের না হলেও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে তারা অগ্রগামী ছিল। প্রাক ইসলামী আরবে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা খুবি অল্প ছিল। যুলকাদ, যুলহজ্জ্ব, মুহররম ও রজব মাসে তারা যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ করে উকাজ নামক বিখ্যাত মেলায় শারীরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও কাব্য প্রতিযোগিতার সম্মেলন করত। সেখানে নাচ, গান, নানা প্রকার খেলাধুলা. ঘোড়েদৌড় ও উষ্ট্র দৌড়ের প্রতিযোগিতা হত।

অন্যদিকে আরবের গণ্যমান্য ব্যক্তিকে বিচারক হিসাবে নিযুক্ত করে বড় বড় কবিরা স্বরচিত কবিতার প্রতিযোগিতা করতেন। বছরের সেরা কবিতাকে মিসরের লিনেন বস্ত্রে স্বর্ণাক্ষরে লিখে কাবা গৃহের দেওয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হত। এই রকম সাতটি কবিতার সমষ্টিকে সাবয়া মুয়াল্লাকাত বা সাতটি ঝুলন্ত কবিতা বলা হত। বন্তুত কাব্যপ্রতিভা ছিল আরবদের জন্মগত। তারা বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তির অধিকারীও ছিল। কথিত আছে, কবি বা উত্তম ঘোড়সওয়ার না হলে যে কোন যুবককে আরবের মেয়েরা বিবাহ করতে অস্বীকার করত। 

প্রাক ইসলামী যুগের রাজনৈতিক অবস্থা চিহ্নিতকরণ

প্রাক আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং হতাশাব্যঞ্জক ছিল। কোনাে কেন্দ্রীয় শক্তির নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব না থাকায় আরবে গােত্র প্রাধান্য লাভ করে। তাদের মধ্যে কোনাে ঐক্য ছিল না। গােত্রসমূহের মধ্যে সব সময় বিরােধ লেগেই থাকত।