ভারতবর্ষে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনা

এইচএসসি 2022 সালের মানবিক বিভাগের ষষ্ঠ সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্ট এর নির্ভুল এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর প্রকাশ করা হলো। ভারতবর্ষে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনা।

নির্দেশনাঃ

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন। বর্ণনা:

ভারতবর্ষে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রম

চুড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বক্সার যুদ্ধের তাৎপর্য বিশ্লেষণ:

• চুড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় দিওয়ানি ও দ্বৈতশাসন

চুড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক ফলাফল বিশ্লেষণ।

 

এসাইনমেন্ট প্রশ্নের উত্তরঃ

ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন বর্ণনাঃ

১৬০০ সালে ভারত ও পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের একদল বণিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে। ৩১ ডিসেম্বর রাণী এলিজাবেথের সনদ বলে উক্ত কোম্পানি উত্তমাশা অন্তরীপ থেকে সমগ্র পূর্বাঞ্চলে বাণিজ্যের একচেটিয়া অধিকার লাভ করে। তারা ১৬০৮-এ মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের শাসনকালে সুরাটে প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি পায়। পরে অন্যান্য স্থানসহ হুগলিতে বাণিজ্য কুঠি স্থাপিত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর ১৬৫৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রতিনিধি হিসেবে জেমস হার্ট ঢাকা প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজ আগমন শুরু হয়।

১৭১৫ সালে মােগল দরবার থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। ঐ মুদ্রা মােগল সাম্রাজ্যেও চালু হয়। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদৌলা কোলকাতা দখল করে নেবার পরে (২০ জুন) লর্ড ক্লাইভ এবং ওয়াটসন তামিলনাড়ু থেকে জাহাজযােগে সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসেন ও কোলকাতা পুনরায় দখল করেন (২জানুয়ারি,১৭৫৭)। কোম্পানির কেরানি, পরে ফ্রান্স-ইংল্যান্ড যুদ্ধ শুরু হলে সৈন্যবাহিনীতে যােগ দেন। নিজের যােগ্যতায় পরে উঁচু পদ পান।

চন্দননগর দখল করার পরে সিরাজউদৌলাকে উৎখাত করার জন্য সিরাজের পরিবারের কয়েকজন ও মীরজাফর, উমিচাঁদ, জগত শেঠ প্রমুখদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেন। চুক্তি মতাে কাজ হয় ও নদীয়ার পলাশির প্রান্তরে সিরাজউদৌলার সঙ্গে মেকি যুদ্ধ হয়। সিরাজউদৌলা পরাজিত হয়ে পালাবার সময় ধরা পড়ে নিহত হন।

 

চুক্তি মতাে মীরজাফর নবাব হন এবং ক্লাইভ নগদ ত্রিশ লক্ষ টাকা ও চব্বিশ পরগনার জায়গিরদারি লাভ করেন। জায়গির থেকে ক্লাইভের বছরে তিন লক্ষ টাকা আয় হত। পরে ১৭৬০-এ ক্লাইভ দেশে ফিরে যান। এ দিকে তার অভাবে ইংরেজরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন আবার ক্লাইভের ডাক পড়ে। ক্লাইভ এ দেশে আবার ফিরে আসেন ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে এবং ইংরেজ সরকারের গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি তখন দিল্লির বাদশাহ শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করেন (১৭৬৫, আগস্ট ১)। বিহার-ওড়িশার প্রকৃত শাসন ক্ষমতা লাভ করে, নবাবের নামমাত্র অস্তিত্ব থাকে। ফলে পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে যে শাসন-ব্যবস্থা চালু হয় তা দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত।

নবাবের হাতে থাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব, আর রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় কোম্পানি। এতে বাংলার নবাব আসলে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে আর এই সুযােগে কোম্পানির লােকেরা খাজনা আদায়ের নামে অবাধ লুণ্ঠন ও অত্যাচার শুরু করে দেয়। ১৭৭০-এ (বাংলা ১১৭৬) অনাবৃষ্টি হয়। দেশে দেখা দেয় চরম বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ। কয়েক লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যান। এটাই ইতিহাসখ্যাত ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এরপর ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে কোম্পানির শাসন চলেছিল মূলত এবং মুখ্যত লাভজনক ব্যবসায়িক দৃষ্টি ও রীতিপদ্ধতিতেই।

কোম্পানির স্বার্থে ও সুবিধার জন্য ১৭৬৫ সালে বাংলার কৃষিপণ্যকে বাণিজ্যিকীকরণ, ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস, ১৮১৩ সালে ভারতে ফ্রি ট্রেড প্রবর্তন এবং ওই বছরই বাংলার মুখ্য শিল্প খাত টেক্সটাইল রপ্তানি বন্ধ, ১৮২০ সালে টেক্সটাইলকে আমদানি পণ্য হিসেবে ঘােষণা, ১৮৩০-এ কলকাতা ডকিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা, ১৮৩৫ সালে ইংরেজিকে অফিস-আদালতের ভাষা হিসেবে ঘােষণা, ১৮৩৮-এ বেঙ্গল বন্ডেড ওয়্যারহাউস অ্যাসােসিয়েশন গঠন এবং ১৮৪০ সালে বেসরকারি খাতে চা-বাগান স্থাপনের মাধ্যমে এ দেশীয় অর্থনীতির স্বনির্ভর সত্তাকে পরনির্ভর করার কার্যক্রম শুরু হয়।

 

বাংলা নামের এই অঞ্চলটি ধীরে ধীরে ইংরেজদের সম্পূর্ণ করায়ত্ব হয় ১৮১৩ সালে। ব্রিটিশ সরকার এক চার্টার অ্যাক্ট বলে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যাধিকার বিলুপ্ত করে এবং দেশের শাসনভার কোম্পানির উপর ন্যস্ত করে। ১৮৫৮ সালে কোম্পানি বিলুপ্ত ঘােষণা করে ব্রিটিশ সরকার ভারতশাসনের দায়িত্ব সরাসরি গ্রহণ করে।

ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রমঃ

ভারতে অনেক কম সময়ের ব্যবধানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রভাব বিস্তারের অনেক বড় একটা কারণ ছিল ১৮ শতকে মুঘল সম্রাটদের আকস্মিক পতন। ১৭৩৯ সালে যখন ক্লাইভের বয়স সবেমাত্র ১৪ বছর তখনও মুঘল সম্রাটরা কাবুল থেকে মাদ্রাজ পর্যন্ত এক বিশাল সাম্রাজ্যের শাসন করছিলেন। কিন্তু ঐ বছরের শেষের দিকে পারস্যের অভিযাত্রী নাদির শাহ তাঁর ১৫০,০০০ অশ্বারােহীর দল নিয়ে খাইবারের গিরিখাতে আক্রমণ চালায় এবং এক মুঘল শাসকের ১.৫ মিলিয়ন সৈন্যের দলকে পরাজিত করেন। এর তিন মাস পর নাদির শাহ পারস্যে ফিরে আসেন মুঘল সম্রাটদের সকল ধন সম্পদ নিয়ে যা তাঁরা ২০০ বছরের শাসনামলে জড় করেছিলেন।

 

মুঘলদের কাছ থেকে লুট করে আনা সম্পদের মধ্যে সম্রাট শাহজাহানের ময়ূর সিংহাসন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা ‘কোহিনূর, এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরা ‘দারিয়া নূর, ৭০০ হাতি, ৪,০০০ উট এবং ১২.০০০ ঘােড়া টানা শকট যেগুলাে ভর্তি ছিল সােনা, রূপা ও অন্যান্য দামি পাথর দিয়ে অন্যতম। নাদির শাহের লুট করা সম্পদের তৎকালীন বাজার মূল্য ছিল ৮৭ মিলিয়ন ইউরাের সমমান।

অর্থাৎ পরবর্তীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর লর্ড ক্লাইভ মিলে বাংলা প্রদেশ থেকে যে পরিমাণ সম্পদ লুট করেছে তার থেকে কয়েক গুণ পরিমাণ বেশি লুট করেছেন নাদির শাহ একাই তাও আবার মাত্র কয়েক দফা আক্রমণে।

বক্সারের যুদ্ধের তাৎপর্যঃ

মীর কাসিম অযােধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও শেষ মােগল সম্রাট (শাহ্ আলম) সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তােলেন। ১৭৬৪ সালের ২২ অক্টোবর তাদের সম্মিলিত সৈন্যবাহিনীর সাথে বক্সার নামক স্থানে ইংরেজ সৈন্যদের ঘােরতর যুদ্ধ হয়। বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজেরা জয়লাভ করে। মীর কাসিম কয়েক বছর অজ্ঞাত অবস্থায় ঘুরে বেড়ান।

 

১৭৭৭ সালে দিল্লির কাছে এক জায়গায় তার মৃত্যু হয়। বক্সার যুদ্ধের পর ইংরেজেরা অযোধ্যাও দখল করে নেয়। সুজাউদ্দীন রােহিলাখণ্ডএ আশ্রয় নেন। এমন প্রেক্ষাপটে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ইংরেজদের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন। স্বাধীনতার অস্তমিত সূর্য’খ্যাত মীর কাসিম বাঁক ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। ইংরেজেরা অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি অর্জন করে নেয়। অন্য দিকে দুর্বল সামরিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতাই মীর কাসিমের পরাজয়ের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইংরেজদের টাকার দাবি মেটাতে মীর জাফর রাজকোষ শূন্য করে ফেলেছিলেন। বহু টাকা ঋণগ্রস্ত ছিলেন।

মীর কাসিমকে এই ঋণ পরিশােধ করতে হয়। তা ছাড়া তিনি মসনদে বসার জন্য কোম্পানির কর্মকর্তাদের দুই লাখ পাউন্ড দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাতে রাজকোষ আরাে শূন্য হয়ে পড়েছিল। এ জন্যই তার অর্থাভাব ছিল বেশুমার। অর্থাভাবের কারণে তিনি ভালােভাবে সৈন্যবাহিনী গঠন করতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, নবাবের কয়েকজন হিন্দু কর্মচারী ও জমিদার বিশ্বস্ত ছিল। তারা ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে মেতে থাকত। জমিদারেরা নিয়মিত খাজনা দিত। তা ছাড়া বক্সারের যুদ্ধে অযােধ্যার নবাবের মন্ত্রী মহারাজ বেণী বাহাদুর পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফর-জগৎশেঠদের মতােই বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের সাহায্য করে।

 

সম্রাটের দিওয়ান সেতাব রায়ও কূটকৌশল অবলম্বন করে ইংরেজদের সাফল্যের পথ সহজ করে দিয়েছিল। তৃতীয়ত, মীর কাসিমের গােলন্দাজ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা মক্কা ও আরাটোন দুইজনই আর্মেনিয়ান খ্রিস্টান ছিল। তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয়নি। সামরিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায় নবাবের সৈন্যরা ইংরেজ সৈন্যদের সমান ছিল না।

রণকৌশল ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে ইংরেজদের শ্রেষ্ঠত্ব ছিল। নবাবের অনিয়ন্ত্রিত সৈন্যরা স্বভাবতই সুনিয়ন্ত্রিত ইংরেজ সৈন্যদের সাথে ভালাে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। সর্বোপরি বিশ্বাসঘাতকতা চারদিক থেকে নবাবকে ঘিরে ধরেছিল। তাই পলাশীর মতাে বক্সারের যুদ্ধেও বিশ্বাসঘাতকতার জয় হয়ে থাকে।

চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় দিওয়ানি ও দ্বৈতশাসনঃ

 

বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে এলাহাবাদের দ্বিতীয় স্বাক্ষর করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া। কোম্পানি মুঘল সম্রাট কে কারা ও এলাহাবাদ অঞ্চল এবং বার্ষিক 26 লাখ টাকা প্রদানের অঙ্গীকার করে দ্বিতীয় শাহ আলম ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানী অধিকার প্রদান করেন।

বাংলা তথা ভারতের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয় এর ফলে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে উন্নত হয় শাসনের সূচনা হয় কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে 1765 এছাড়াও দ্বৈত শাসনের সূচনা হয় কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে 1765 খ্রিস্টাব্দে বাংলার দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল।

 

এই ব্যবস্থায় নবাবের হাতে ছিল নিজামত বা রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব।আর কোম্পানির হতে ছিল দেওয়ানী বা রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত অধিকার।বাস্তবে নবাবের ছিল ক্ষমতাহীন দায়িত্ব,অপরপক্ষে কোম্পানির হাতে ছিল দায়িত্বহীন ক্ষমতা।বাংলায় কোম্পানির আর্থিক শ্বসন চরম আকার ধারণ করেছিল রাজস্ব আদায় হয়েছিল।

1764-1765 খ্রিস্টাব্দে রাজস্ব আদায় হয়েছিল । কোটি 13 লক্ষ টাকা এবং 1765 খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানি আদায় করেছিল দুই লক্ষ টাকা সৃষ্টি হয়েছিল শেষ পর্যন্ত বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস খ্রিস্টাব্দে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছিলেন

আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ফলাফলঃ