একতাবদ্ধ হওয়ার এবং সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে নিষেধের গুরুত্ব

একতাই বল। কুরআনে পাকে আল্লাহ তাআলা একতাবদ্ধভাবে থাকার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রুজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ কর। আর তোমরা পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হইওনা।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)

একতাবদ্ধ জীবন-যাপন করা ইসলামের মূল শিক্ষার একটি। একাকি জীবন-যাপনে রয়েছে নানাবিধ ঝুঁকি ও বিপদ। তা হতে পারে দুনিয়াবি কাজের ঝুঁকি আবার হতে পারে পরকালের আমলি কাজের জন্যও ঝুঁকি।

হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামায়াতবদ্ধ জীবনে গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। একতাবদ্ধ জীবন-যাপনকারী ব্যক্তি একাকি জীবন-যাপনকারীর ব্যক্তির তুলনায় অনেক গুণ বেশি নিরাপদ। তাওহিদের পরে মুমিনদেরকে যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে তা হলো- ঐক্য।

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, সালাত কায়েম কর এবং কখনো মুশরিকদের দলভূক্ত হয়ো না, যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে, এদের প্রত্যেকটি দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই মত্ত। ’ -সূরা তাওবা: ৩১-৩২

একতাবদ্ধ জীবনের বাহিরে অবস্থানকারী ব্যক্তি সম্পর্কে প্রিয়নবির একটি সতর্কবাণী তুলে ধরতে চাই। প্রিয়নবি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একতাবদ্ধ জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নিলো; আর এ অবস্থায় যদি সে মৃত্যুবরণ করে; তবে তা হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু।’

সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে নিষেধের গুরুত্ব

সৎ কাজের জন্য বলা ও অসৎ কাজ থেকে নিবৃত্ত করা। সৎ বা ন্যায়সংগত কাজ করা এবং অন্যায় বা অসংগত কাজ থেকে বিরত থাকা যেমন প্রত্যেক ব্যক্তির অবশ্যকর্তব্য, তেমনি অপরকে সৎ বা ন্যায়সংগত কাজের জন্য আদেশ, উপদেশ বা উৎসাহ দেওয়া এবং অসৎ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখাও পবিত্র দায়িত্ব।

“তোমরাই সর্বোৎকৃষ্ট উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ করো এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করো” (সূরা আল-ইমরান : ১১০)।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট, শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেন। এবং সাথে সাথে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আমাদের কাজ কী হবে তাও বলে দিলেন। সাবলীল ভাষায় হুকুম দিলেন, ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’।

এ ব্যাপারে হজরত মোহাম্মদও (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কোনো অন্যায় কাজ দেখতে পায়, তবে নিজের শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে তা প্রতিরোধ করবে। আর যদি সে সামর্থ্য না থাকে, তবে উপদেশ দিয়ে সংশোধন করবে। আর যদি তা-ও না পারে, তবে আন্তরিক ঘৃণা নিয়ে তা থেকে দূরে থাকবে, কিন্তু তা হবে দুর্বল ইমানের পরিচয়।’

কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক বান্দাদের ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ সম্পর্কে সরাসরি হুকুম জারি করলেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আপন উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করলেন।

আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল উভয়ের একই বাণী দ্বারা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে, ইসলামে ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। আদেশ-নিষেধের পদ্ধতি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ কিভাবে করব সেটাও ইসলামী শরীয়তে বলা আছে।