১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের আঙ্গিকে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন উপযোগী দরিদ্র আইন প্রণয়নের রূপরেখা অঙ্কন

১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের আঙ্গিকে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন উপযোগী দরিদ্র আইন প্রণয়নের রূপরেখা অঙ্কন – দরিদ্র আইন একটি সামগ্রিক ও সাধারণ পরিভাষা। দরিদ্র আইনের ভিত্তিভূমি হিসেবে ইংল্যান্ডকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। মূলত দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ভিক্ষাবৃত্তি রোধকল্পে চতুর্দশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ইংল্যান্ডে যেসব আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয় সেগুলোকেই দরিদ্র আইন বলা হয়।

অন্যভাবে বলা যায় ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ভিক্ষুক, ভবঘুরে এবং সমাজের দুস্থদের কল্যাণে দরিদ্রদের শ্রেণিকরণ, সংশোধনের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণমূলক আইনকে দরিদ্র আইন বলে। দরিদ্র আইনগুলোর মধ্যে রাজা অষ্টম হেনরি প্রণীত দরিদ্র আইন, এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন, শ্রমিক আইন, দরিদ্র আইন ১৮৩৪ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিক সমূহ:

১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন The Elizabethan Poor Law of 1601 প্রাকশিল্প যুগে ইংল্যান্ড বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান এ দারিদ্র্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু ষােড়শ শতাব্দী পর্যন্ত সমস্যা মােকাবিলায় গৃহীত সরকারি কার্যক্রমের বেশির ভাগই ছিল শাস্তি ও দমনমূলক। এর পরিপ্রেক্ষিতে সপ্তদশ শতকের প্রারম্ভেই ইংল্যান্ডের শাসকশ্রেণি ১৩৪৯ থেকে ১৬০১ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের অভিজ্ঞতার আলােকে দরিদ্রদের কার্যকর সাহায্য প্রদানের চিন্তাভাবনা শুরু করে।

দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং দরিদ্রদের সঠিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি উল্লেখযােগ্য পদক্ষেপ হিসেবে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রণয়ন করা হয়। ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ভবঘুরে সমস্যা মােকাবিলায় এটি ছিল ৪৩তম প্রয়াস। ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাবেথ-এর সময় এই আইনটি প্রণীত হয় বলে অনেকে একে ‘৪৩তম এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

এ আইন সম্পর্কে ডব্লিউ, এ farworteta cu- “The Poor Law of 1601 was a codification of the preceding poor relief legislation” ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ধারা/বিধান (Provisions of the Poor Law of 1601) ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে সেবাদানের ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি দরিদ্রদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের কর্তব্য চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়াও দরিদ্রের শ্রেণিবিভাগ এবং আইন প্রয়ােগের কঠোরতার উপর গুরুত্বারােপ করা হয়।

সে সময় এ আইনকে সরকারি দায়িত্বশীলতার সূচনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হতাে। এর মাধ্যমে দরিদ্রদের সাহায্য ও পুনর্বাসনে কার্যকর প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। এতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান রাখা হয়, যা নিচে উল্লেখ করা হলাে১, সামর্থ্যবান পরিবার ও সম্পদশালী আত্মীয়স্বজন যেন দায়িত্বগ্রহণে বাধ্য থাকে সেজন্য দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিকে সাহায্যদানের তালিকায় না রাখা।

২, প্যারিশ বা স্থানীয় গির্জার অধীনস্থ এলাকায় শুধু সেসব দরিদ্রকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব গ্রহণ করবে যারা প্যারিশের জন্মগত বাসিন্দা অথবা কমপক্ষে তিন বছর ধরে প্যারিশে বসবাস করছে এবং যাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সাহায্যদানে অক্ষম।

৩, শারীরিকভাবে সক্ষম ও সচ্ছল আত্মীয়স্বজন সম্পন্ন ভিক্ষুকদের সাহায্য দেওয়া নিষিদ্ধ ঘােষণা করা হয়। এছাড়া Johnson (1995) ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের প্রধান কতগুলাে বিধানের কথা উল্লেখ করেন। এগুলাে হলাে—

১, স্থানীয় পর্যায়ে দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা।

২. আত্মীয়স্বজনদের দায়িত্বশীলতা বা পিতা কর্তৃক তার সন্তান ও সন্তানের সন্তানকে সহায়তা করা আর সন্তানদের তার | নির্ভরশীল পিতা ও পিতামহকে সহায়তা দেওয়ার বিধান করা।

৩, প্রত্যেক প্যারিশের অধিবাসী কর্তৃক প্যারিশের নিজস্ব দরিদ্র কর প্রদান।

৪, সাহায্যদানের সুবিধার্থে দরিদ্রদের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্তিকরণ। যা মূলত নিম্নরূপ: ক. সক্ষম দরিদ্র (Able-bodied Poor): সবল বা কর্মক্ষম ভিক্ষুকদের সক্ষম দরিদ্র বা ‘sturdy Beggar’ বলা হতাে।

১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন এর অবদান:

প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য দূরীকরণ, ভিক্ষাবৃত্তিরোধ, ভবঘুরে প্রতিকার, দুস্থ ও অসহায়দের সেবা প্রদান প্রভৃতি ব্যাপারে প্রথম সরকারিভাবে আইন প্রণয়ন করা হয় ১৬০১ সালে। নিম্নে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১- সাহায্য ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা: ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে সামাজিক সমস্যা হিসেবে স্বীকৃত ভিক্ষাবৃত্তিরোধ করা সম্ভব হয়। দরিদ্রদের পুনর্বাসনের ফলে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

২. অলস ও অকর্মণ্য শ্রেণীর সংখ্যা হ্রাস : এ আইন প্রণয়নের ফলে সমাজের অক্ষম ও অকর্মণ্য শ্রেণীর সংখ্যা হাস পায়। সক্ষম, অক্ষম দরিদ্র সংশোধনাগারে এবং নির্ভরশীল শিশু মনিবের বাসস্থানে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়।

৩. স্থানীয়ভাবে সেবা প্রদান : আইনে প্যারিস (এলাকা) ভিত্তিক দরিদ্রদের সেবা প্রদানের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (প্যারিস) এলাকার জনগণের সহায়তায় দরিদ্রদের সাহায্য প্রদানের নীতি গ্রহণ করে।

৪. সমাজকর্ম পদ্ধতির বিকাশ : সমাজকর্মকে পেশাগত মর্যাদায় উন্নীতকরণে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা অপরিসীম। এ আইন আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কালক্রমে এ সেবা সরকারি স্বীকৃতির মাধ্যমে পেশাগত সমাজকর্মের মর্যাদায় উন্নীত করতে সহায়তা করে।

৫. দরিদ্রতা থেকে মুক্তি : এ আইন প্রণয়নের ফলে দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মানুষ মুক্তি পায়। দরিদ্রদের ত্রাণ সহায়তা এবং পুনর্বাসনের ফলে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। এ ব্যবস্থায় দরিদ্র ও অসহায় ব্যাক্তিরা তাদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তা লাভ করে।

[সপ্তাহ-১১] এইচএসসি 2022 এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও সমাধান – সমাজকর্ম ১ম পত্র