দেশের অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবায় অবদান বিশ্লেষণ

অ্যাসাইনমেন্টঃ দেশের অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবায় অবদান বিশ্লেষণ।

উত্তরঃ

ব্যবসায়ের ধারণাঃ

ব্যবসায় হচ্ছে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড | ব্যক্তির মুনাফা পাওয়ার আশায় পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদনের মাধ্যমে উপযােগ সৃষ্টি এবং মানুষের বস্তুগত ও অবস্তুগত অভাব পূরণের লক্ষ্যে সেগুলাে বন্টন এবং এর সহায়ক সবরকম বৈধ, ঝুঁকিবহুল ও ধারাবাহিক কার্যকে ব্যবসা বলে| ব্যবসায় অবশ্যই ঝুঁকি থাকবে।

পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা, হার্স-মুরগি পালন করা, সবজি চাষ করাকে ব্যবসায় বলা যায় না। কিন্তু যখন কোনাে কৃষক মুনাফার আশায় ধান চাষ করে বা সবজি ফলায় তা ব্যবসায় বলে গণ্য হবে| যদি দেশের আইনে বৈধ ও সঠিক উপায়ে পরিচালিত হয় তবে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যবসা বলে গণ্য হবে।

ছকসহ ব্যবসায়ের আওতাঃ

উৎপাদনের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ হতে আরম্ভ করে তৈরি পণ্য বা সেবা ভােক্তার হাতে পৌছানাে পর্যন্ত সকল কার্যাবলিই ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধির অন্তর্ভুক্ত।

শিল্প (Industry)ঃ যে কর্ম প্রচেষ্টা বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং এর উপযােগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযােগী পণ্য প্রস্তুত করা হয় তাকে শিল্প বলে। শিল্পের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন শিল্প পণ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সম্পৃক্ত, সম্পদ বা মূল্য উৎপাদনই শিল্পের মূল লক্ষ্য, শিল্প পণ্যের আকারগত উপযােগ সৃষ্টি করে ইত্যাদি।

বাণিজ্য (Commerce)ঃ শিল্পে উৎপাদিত পণ্য প্রকৃত ভােগকারীর নিকট অথবা কাঁচামাল ও অর্ধ প্রস্তুত পণ্য পরবর্তী ভােগকারীর বা উৎপাদকের নিকট পৌঁছানাের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল প্রতিবন্ধকতাকে দূরীকরণের জন্য গৃহীত যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে বাণিজ্য বলে। বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে পণ্য সংগ্রহ ও বণ্টন: পণ্য উৎপাদন হয় এক স্থানে এবং ভােগ হয় বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্য ব্যবসায়, পরিবহণ,গুদামজাতকরণ, বীমা, ব্যাংকিং ও প্রচার ব্যবস্থার মাধ্যমে ঐ সমস্ত পণ্য সংগ্রহ করে বণ্টন করে। প্রত্যক্ষ

সেবাঃ চিকিৎসা বৃত্তি, আইন বৃত্তি, হিসাব বৃত্তি, প্রকৌশলী বৃত্তি, পরামর্শ বৃত্তি, হােটেল, সেলুন, নাট্যশালা, সিনেমা হল, অভিনেতা, অভিনেত্রীদের অভিনয়, ডাক্তাররা মিলে ক্লিনিক ব্যবসা বা কয়েকজন উকিল মিলে এটর্নি ফার্ম বা প্রকৌশলীরা মিলে ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম গঠন ইত্যাদি প্রত্যক্ষ সেবার অন্তর্ভুক্ত। এতে পণ্য ছাড়া সরাসরি সেবা প্রদান সম্ভব হয়। এতে সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতা উভয়ের উপস্থিতি থাকতে হয়।

ব্যবসাযের কার্যাবলীঃ

১. উৎপাদন ( production): উৎপাদন ব্যবসায়ের প্রাথমিক ও মূখ্য কাজ।

২.পরিবহন (Transportation): একেক এলাকায় একেক পণ্য উৎপাদিত হয়। পণ্যসামগ্রী দেশের বিশেষ এলাকায় উৎপাদিত হয়। তাই উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে উৎপাদন কেন্দ্র হতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে ভােক্তাদের কাছাকাছি মজুদ করা হয়।

৩.ক্রয়-বিক্রয় (Buying and selling): ব্যবসাযের অন্যতম প্রধান কাজ হলাে পণ্য ও সেবা ক্রয়বিক্রয় করা।

৪. অর্থ সরবরাহ (Supply of money): এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি। ব্যবসায়ের প্রয়ােজন অনুসারে ব্যাংকিং-এ নিয়ােজিত প্রতিষ্ঠানগুলাে অর্থ সরবরাহের মাধ্যমে ব্যবসায়-বাণিজ্যকে গতিশীল করে তােলে।

৫. ঝুঁকি হস্তান্তর (Transferring risk): ব্যবসায়ের মাধ্যমে ব্যবসায়-সংক্রান্ত বহুবিধ ঝুঁকিও হস্তান্তরিত হয়।

৬. হিসাবরক্ষণ (Accounting): ব্যবসায় হিসাব রক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য। ব্যবসায়ী লেনদেন হিসাবভুক্ত করাই এ কার্যের অন্তর্ভুক্ত। আর্থিক অবস্থা জানতে এর বিকল্প নেই।

৭. বিজ্ঞাপন ও প্রচার (Advertisement and publicity): সঠিক মানুষের কাছে পণ্যটির তথ্য পৌঁছাতে বিজ্ঞাপন সহায়তা করে।

৮. বাজার গবেষণা ও পণ্য উন্নয়ন:(market analysis) বর্তমানে ব্যবসায় খুবই প্রতিযােগিতামূলক হয়ে উঠেছে অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠান ভালাে মানের পণ্য উৎপাদন করে গ্রাহকরা সেই পণ্য ক্রয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। তাই পণ্য উৎপাদনের পূর্বে বাজার গবেষণা করে পণ্যের মান উন্নয়ন করা ব্যবসায় কার্যাবলীর আওতাভূক্ত।

ব্যবসাযের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব অনেকঃ

১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. শ্রমবিভাগের সুফল: শ্রমবিভাগ এবং বিশেষীকরণের উদ্ভব হত্যার ফলে শ্রম দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং পণ্যের মূল্য কম পড়ে।

৩. পুঁজি গঠন: ব্যবসাযের কারনে পুঁজি গঠন হয়। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

৪. প্রযুক্তির ব্যবহার ও অর্থনৈতিক কল্যাণ: ব্যবসায় নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে নিত্যনতুন চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে।

৫. সরকারি আয় বৃদ্ধি: ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলাের নিকট থেকে বিভিন্ন প্রকার কর ও শুল্ক বাবদ সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করে। এতে সরকারের আয় বৃদ্ধি পায়।

৬. সম্পদের ব্যবহার: ব্যবসাযের ফলে সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

৭. পরনির্ভরশীলতা দূরীকরণ: পরনির্ভরশীলতা দূর করতে ব্যবসায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে যােগাযােগ,পরিবহণ ও সেবা খাতের অবদানঃ

ব্যবসাযের কারণে চাকরির নির্ভরতা কমেছে। অনেকে যােগাযােগ,পরিবহণ ও সেবা খাতের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন। ফলে হ্রাস পেয়েছে বেকারত্ব। ব্যবসায়ের মাধ্যমে নিত্যনতুন বিলাসবহুল পণ্য উৎপাদিত হয়েছে ফলে জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ব্যবসায়ে উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে আয় বেড়েছে ফলে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্যবসায় বিশেষ করে সেবা খাত স্বাধীন পেশা হাতে অনেকে ব্যবসাযের দিকে ঝুঁকেছে ফলে জীবন্যাত্রার মান উন্নয়নে তা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। যােগাযােগের উন্নয়নে উন্নত হয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান। তাই বলা যায় একটি দেশের অর্থনীতি ও জনগােষ্ঠির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে যােগাযােগ, পরিবহন ও সেবা খাতের অবদান অনেক। উন্নয়নে উন্নত হয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান। তাই বলা যায় একটি দেশের অর্থনীতি ও জনগােষ্ঠির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে যােগাযােগ, পরিবহন ও সেবা খাতের অবদান অনেক।