সমাজের ৪ শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষ যেমন- কুলি, রাজমিস্ত্রি, কামার, মুচি উনাদের সমাজে অবদান এবং যেভাবে তাদের মূল্যায়ন করা যায় সে বিষয়ে একটি কর্মপত্র দেওয়া হল। এটি অনুসরণ করে তোমরা সুন্দরভাবে লিখে দিও। ২০২২ সালের সপ্তম (৭ম) শ্রেণির প্রথম সপ্তাহের বাংলা এসাইনমেন্ট অনুযায়ী সমাজ ও সভ্যতা গঠনে শ্রমজীবী মানুষের অবদান নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান উত্তর এখানে দেওয়া হলো:
ভূমিকাঃ আমাদের সমাজে অনেক শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে সামাজিক যারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উনাদের কাজের জন্য আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খুব সহজে সমাধান করা সম্ভব হয়।
সমাজে কুলি, রাজমিস্ত্রি, কামার, ও মুচি এই চারজনের শ্রমজীবী মানুষের গুরত্ব বলে শেষ করা যাবেনা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চার শ্রেণীর মানুষের অবদান অনেক। প্রতিটি স্টেপে তাদের কার্যক্রম আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কিন্তু আমরা এই চার শ্রেণীর মানুষকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনা। আমাদের উচিত তাদের কর্মকাণ্ড করলো কে এবং তাদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা।
কুলিঃ ভাড়াটে শ্রমিক অথবা বোঝা বহনকারী অর্থে শব্দটি ব্যবহূত হয়। উনিশ শতক ও বিশ শতকের প্রথমদিকে
মাদাগাস্কার, মরিশাস, ফিজি, পশ্চিম ভারতীয় দেশসমূহ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহে চাষাবাদের জন্য ভারত ও চীন থেকে শ্রমিকদের চুক্তিপত্র সম্পাদনের মাধ্যমে নেওয়া হতো।
রাজমিস্ত্রিঃ যে সব শ্রমিক ভবন, সড়কপথ, রেল, বিমানবন্দর, স্টেডিয়াম সহ বড় বড় স্থাপনা নির্মান, বিদ্যুত-পানি-গ্যাস-টেলিফোন লাইন স্থাপন ও মেরামত, জলাশয়, বাঁধ, জলাধার ও সুড়ঙ্গসহ যে কোন প্রকার উন্নয়ন প্রকল্পে যে কোন রকম স্থাপনা নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এমনকী ভাঙার কাজ করছেন তাঁরাই নির্মাণ কর্মী বা রাজমিস্ত্রি।
কামারঃ কামার একটি প্রাচীন পেশার নাম যার কাজ লোহার জিনিসপত্র তৈরি করা। মূলত হিন্দু ধর্মের জনগোষ্ঠী এই পেশায় জড়িত। একসময় গৃহস্থালি ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত অধিকাংশ লৌহযাত যন্ত্রপাতি কামাররা প্রস্তুত করতেন।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দা, বটি, পেরেক, শাবল, কুড়াল, ছুরি ইত্যাদি।
কামারের কর্মস্থলকে বলে কামারশালা। কামারশালায় হাপর দিয়ে কয়লার আগুন-কে উস্কে রাখা হয়। এই আগুনে লোহা গরম করে তাকে পিটিয়ে বিভিন্ন আকারের জিনিস তৈরি হয়।
মুচিঃ জুতা তৈরি এবং জুতা মেরামতের কাজ করেন। ত্রুটিযুক্ত বা পুরানো জুতা-সেন্ডেল মেরামত করে রং মাখিয়ে চাকচিক্য সৃষ্টি করাও এদের কাজ।
মুচি ও চামার প্রকৃত অর্থে পৃথক দুটি সস্প্রদায় হলেও তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ। চামার সস্প্রদায় পশুচামড়া সংগ্রহ করেন।
এরা গ্রামের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে এমনকি ঈদুল আযহার সময় মুসলিম পরিবারসমূহ থেকেও পশুচামড়া সংগ্রহ করেন।
সমাজে মুচি অবদান:
মুচি হিসেবে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষ রা আমাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে তা আলোচনা করা হল।
১. পুরাতন জুতা মেরামত করার মাধ্যমে মুচি সম্প্রদায়ের মানুষেরা আমাদের অর্থ সাশ্রয় করে থাকে।
২. অল্প টাকায় কাজ করে তারা আমাদের জুতা চামড়াজাত পণ্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার কাজ করে থাকে।
৩. চামড়া এবং চামড়া দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাকচিক্য ধরে রাখার জন্য তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
৪. ওদের কাজের মাধ্যমে আমাদের সৌন্দর্য এবং সভ্য হতে সাহায্য করে।
মুচি পেশাজীবীদের অবদান মূল্যায়ন:
যেহেতু মুচি পেশার শ্রমজীবী মানুষ ওরা আমাদের অনেক উপকার করে থাকে সুতরাং আমাদের উচিত কামার শ্রমজীবী মানুষদের যথাযথ মূল্যায়ন করা।
যে সকল উপায়ে কামার এর যথাযথ মূল্যায়ন করা যেতে পারে তার কয়েকটি নিম্নে আলোচনা করা হল।
১. ন্যায্য পাওনা দেওয়ার মাধ্যমেঃ আমরা অনেক সময় কামার ন্যায্য পাওনা দিতে অনীহা প্রকাশ করি। আমাদের উচিত মুচি পেশায় যারা কাজ করছেন তাদের সঠিক এবং ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা।
২. সম্মান দেখানোঃ এ পেশায় যারা কাজ করেন তাদেরকে আমরা সাধারণত অন্য চোখে দেখি। তাদেরকে সম্মান দেখাতে চাইনা।
আমাদের উচিত মুচি পেশায় যারা কাজ করছেন তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাদের সাথে ভালো আচরণ করা।
৩. অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেওয়াঃ আমরা অনেক সময় এ ধরনের শ্রমজীবী মানুষদের অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বেশি কাজ আদায় করে নিতে চাই যা কোনোভাবেই উচিত নয়।
আমরা পরিমিত কাজ প্রদানের মাধ্যমে তাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারি।
৫. প্রণোদনা দেওয়াঃ আমরা মাঝেমধ্যে মুচি শ্রমজীবী মানুষদের কাজের বিনিময় কিছু বাড়তি প্রণোদনা দিতে পারি। তাহলে তারা কাজে উৎসাহ পাবে এবং নিজেকে ছোট মনে করবে না।
৬. উৎসাহ প্রদান করাঃ এই পেশায় কর্মরত পেশাজীবীদের যথাযথ উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং কাজের মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
৭. ভালো ব্যবহার করাঃ মুচি এর সাথে আমাদের ভালো ব্যবহার করা উচিত। এর মাধ্যমে আমরা তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা করতে পারি।
৮. পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানঃ মুচি পেশায় কর্মরত শ্রমজীবীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সমাজে তাদের অবদানের মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
Class 7 Bangla (1st Week) Assignment Solution February, 2022 PDF File See Here