[Download] 21 ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ভাষণ, কবিতা, রচনা প্রতিযোগিতা

এই পোস্টটি পড়ার পর, আপনি লিখতে পারেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুচ্ছেদ 21শে ফেব্রুয়ারি অনুচ্ছেদ- ক্লাস 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, JSC, 9, 10, SSC, 11, 12, এইচএসসি, 21 february kobita, vason, rochona । ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের ইতিহাসে লাল অক্ষরের দিন। এই দিনটিকে শহীদ দিবস বা মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। 1952 জুড়ে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র এবং সাধারণ জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের এই অবিচল ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল যে “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” বাঙালিরা এই অন্যায় আরোপ এবং তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা অস্বীকার করার বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করেছিল।

২১শে ফেব্রুয়ারিকে বাংলায় শহীদ দিবস, ‘একুশে’ (২১শে), ভাষা আন্দোলন দিবস, শহীদ দিবস এবং ‘শহীদ দিবস’ নামেও ডাকা হয়। 1952 সালে বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের স্মরণে 21শে ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হল ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের পাশাপাশি বহুভাষিকতার প্রচারের জন্য 21শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক বৈশ্বিক অনুষ্ঠান।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের ধারণার উৎপত্তি বাংলাদেশ থেকে। 21শে ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) জনগণ সেই দিনটিকে স্মরণ করে যেদিন তারা বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য লড়াই করেছিল। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পালন করা হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি কবিতা

আপনার জন্য সেরা 21 ফেব্রুয়ারি বাংলা এসএমএস। আমরা জানি, ২১শে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বের জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশে এই দিনটি বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য খুবই বিশেষ। এদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা হলেন সালাম, রফিক, জব্বার, বোরকাত প্রমুখ।

রক্তে কেনা বাংলা আমার লক্ষ শহীদের দান,
তবুও কেনো বন্ধু তোমার বিদেশের প্রতি টান ?
সকাল বেলা পান্তা খেয়ে বৈশাখের ওই দিনে,
বিকেলে আবার উঠছো মেতে ইংলিশ হিন্দি গানে ।

২১ ফেব্রুয়ারি ভাষণ

২১ ফেব্রুয়ারি রচনা প্রতিযোগিতা

রচনা নামঃ “২১ শে ফেব্রুয়ারি”

ভূমিকাঃ

‘মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতন।’

এ কেবল নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, এ হচ্ছে সর্বকালের মানুষের চিরন্তন অনুভূতি। মাতৃদুগ্ধ যেমন শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি, তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমেই ঘটতে পারে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিকাশ। মানুষের পরিচয়ের সেরা নির্ণায়ক মাতৃভাষা। মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। মা ও মাটির মতোই প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে এই সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব বাংলার জনগণ রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল সেই মাতৃভাষার মর্যাদা।বিশ্ব এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদার স্বীকৃতি এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

মাতৃভাষা কীঃ

সাধারণ অর্থে মাতৃভাষা বলতে আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষাই বোঝায়। একটি বৃহত্তর অঞ্চলে একই সাথে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত থাকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটাই হচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মায়ের মুখের আঞ্চলিক বুলি মাত্র নয়, মাতৃভাষা হচ্ছে একটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ভাষা। যা তারা স্বতস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করে। মাতৃভাষা বহতা নদীর মতো শত ধারায় প্রবহমান। বাঙালির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন, বাংলা আমাদের অহংকার।

মাতৃভাষার গুরুত্বঃ

প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- ‘মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা এই তিনটি জিনিস সবার কাছে পরম শ্রদ্ধার বিষয়।’ মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা-আকাক্সক্ষা, আবেগ-অনুভূতি। মাতৃভাষাই মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে তৃপ্তি ও পরিপূর্ণতা দান করে। জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে হলে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প হতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশে মাতৃভাষা হচ্ছে প্রধান মাধ্যম। কবি রামনিধি গুপ্তের ভাষায়-

নানান দেশের নানান ভাষা

বিনা স্বদেশি ভাষা;

পুরে কি আশা।

মাতৃভাষা ও সাহিত্য :

একুশকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অনেক গল্প কবিতা উপন্যাস। এক কথায় সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের পিছনে হাতিয়ার ছিল ভাষা আন্দোলন। তৎকালীন সময়ে সাহিত্য কিছুটা হলেও ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। একুশ নিয়ে প্রথম রচিত কবিতা ‘‌কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’‌ রচিয়তা ছিলেন মাহবুবুল আলম চৌধুরি। কবিতাটি রচিত হয় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৭টায়। ১৭ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এ কবিতাটি ছাপা হয় কোহিনুর প্রেস, আন্দরকিলা থেকে। কবিতাটি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে পাঠ করেন চৌধুরি হারুন উর রশিদ। সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা তৎকালীন সময়ে উৎসাহ দিয়েছিলো ভাষা আন্দোলনের।

মাতৃভাষার বিকৃতি ও অবজ্ঞা:

২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর প্রাচীন ভাষাগুলোর একটি বো ভাষায় কথা–বলা বোয়া সিনিয়র নামের একমাত্র মানুষটির মৃত্যু হয়েছে। আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারে বোয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেল বো ভাষা। আগামী ৪০-৫০ বছরের মধ্যে এমনি হারিয়ে যাবে শত শত ভাষা। বাংলা ভাষাকে বিভিন্ন দেশে যেভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, যেভাবে টিভি, রেডিওতে বাংলা–ইংরেজি মিলিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে, তাতে বাংলা ভাষার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আজকাল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান যেন ছাত্রদের ইংলিশ শিখাতেই নির্মিত হয়েছে। অভিবাবকরা বেশি ঝুঁকে যাচ্ছে বাচ্চাদের ইংরেজি শিখানোর প্রতি। সেই কারণেই দোকানের বাংলা নাম ইংরেজিতে লেখা হয়, গ্রাহকের ইংরেজি জ্ঞান থাকুক আর না থাকুক ব্যাঙ্ক–বিমার কাগজপত্র ইংরেজিতেই লেখা হয়। বিপণি বিতানের পরিবর্তে আমরা দেখি শপিং মল, আদর্শ শহরের পরিবর্তে পাই মডেল টাউন। ইংরেজি অথবা হিন্দি ভাষা সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনে বাঙালির মাতৃভাষা কতটা নিরাপদ?

আরও দেখুন: ২১ ফেব্রুয়ারি কবিতা, ব্যানার, ছবি, ওয়ালপেপার, গান, ছোট কবিতা আবৃতি ২০২৪

উপসংহারঃ

একুশ আমাদের জাতীয় মুক্তির চেতনার উৎস হিসাবে কাজ করেছে। আমাদের মহান একুশ আজ স্বদেশের আঙিনা পেরিয়ে বৈশ্বিক চেতনায় পরিণত হয়েছে। এখন আমাদের করণীয় হলাে, জ্ঞানের সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়ােগ বৃদ্ধিতে সাধ্যমতাে প্রয়াস চালানাে। মাতৃভাষার শক্তি বাড়িয়ে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে নতুন শতকের জন্যে নিজেদের প্রস্তুত করা। বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারকে মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। মাতৃভাষার সেবা করার পাশাপাশি বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মাতৃভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানাে। ২১ আমাদের গর্ব ২১ আমাদের অহংকার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই চেতনাকে সবার মধ্যে সঞ্জীবিত করার মধ্যেই নিহিত আছে এই মহান দিবসের সার্থকতা।