তোমার পরিবারে বসবাসরত ষাটোর্ধ্ব তোমার দাদা বা নানার কাছে তুমি 1971 সালে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারলে যে যুদ্ধ শুরু হলে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গঠিত মুজিবনগর সরকার যুদ্ধ পরিচালনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন রাখে। মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক দলসহ সকল এর ভূমিকা মূল্যায়ন করে নির্দেশনা অনুসরণ একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন কর।

তোমার পরিবারে বসবাসরত ষাটোর্ধ্ব তোমার দাদা বা নানার কাছে তুমি 1971 সালে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারলে যে যুদ্ধ শুরু হলে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গঠিত মুজিবনগর সরকার যুদ্ধ পরিচালনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন রাখে। মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক দলসহ সকল এর ভূমিকা মূল্যায়ন করে নির্দেশনা অনুসরণ একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন কর।

প্রিয় দশম শ্রেণী বা এস এস সি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা। আপনারা আমাদের এই অংশের দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় তৃতীয় সপ্তাহের পূর্ণাঙ্গ উত্তর পাবেন।

যা আমরা লিখিত আকারে এবং স্বচ্ছ ছবিও পিডিএফ আকারে তুলে ধরেছি। যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা অনলাইন থেকে পিডিএফ অথবা ছবি ডাউনলোড করে পরবর্তীতে অফলাইন থেকে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট খাতায় উত্তর তুলতে পারে। চলন এস এস সি বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অ্যাসাইনমেন্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের পূর্ণাঙ্গ উত্তর দেখা যাক।

প্রতিবেদনের বিষয়ঃ মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক দলসহ সকল এর ভূমিকা
প্রতিবেদনের তারিখঃ……………………….
প্রতিবেদক এর নাম ও ঠিকানাঃ……………………….
প্রাপকের নাম ও ঠিকানাঃ……………………

ভূমিকাঃ

স্বাধীনতার ঘােষণা দেওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সরকার গঠন হবে তা অকল্পনীয় ছিল পাকিস্তানের কাছে।কিন্তু দোর্দণ্ড প্রতাপে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশ। কারণ গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার বা মুজিবনগর সরকার। এই অস্থায়ী সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই পরিকল্পিত কায়দায় মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত ও সমন্বয় সাধন করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় করেছিল মুজিবনগর সরকার।

মুজিবনগর সরকার গঠন ও শপথের তারিখঃ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার( মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নামেও পরিচিত) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায়( বর্তমানে মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করেন।Bottom of Form শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জেলে। তার অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নাম ঘােষণা করেন মেহেরপুর তৎকালীন আয়ােজিত এই অনুষ্ঠানে। সেখানে তিনি বলেন, “সাংবাদিক বন্ধুগণ এবং উপস্থিত জনসাধারণের, আপনাদের সামনে আমার মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রীকে আপনাদের সামনে সর্বপ্রথমে উপস্থিত করছি। জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ।

সবাই হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এবং পরাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মােশতাক আহমেদ ছাড়াও তিনি অনুষ্ঠানে হাজির করেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবংএ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীর নাম ঘােষণা করা হয়। গণপরিষদের স্পিকার ইউসুফ আলী তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।এছাড়াও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির অধ্যাপক মােজাফফর আহমেদ, কমরেড মনিসিং, জাতীয় কংগ্রেসের মনােরঞ্জন ধর, তাজউদ্দিন আহমেদ ও খন্দকার মােশতাক আহমেদ এই ৬ জন সদস্য উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।

মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম মুজিবনগর স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের কাঠামাে নিম্নরূপ:

  1. রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
  2. উপ রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম
  3. প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ
  4. অর্থমন্ত্রী- এম মনসুর আলী মে
  5. স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান
  6. পররাষ্ট্রমন্ত্রীও আইনমন্ত্রী খন্দকার মােশতাক আহমেদ

১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য দ্বারা মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করা ছিল এ সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য। বাঙালি কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকার প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করে। এতে মােট ১২টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছিল এগুলাে হচ্ছে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়, সাধারণ প্রশাসন, স্বাস্থ্যও কল্যাণ বিভাগ ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন যুব ও অভ্যর্থনা শিবির নিয়ন্ত্রণ বাের্ড ইত্যাদি। মুজিবনগর সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর যেমন কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন,নিউইর্ক,স্টকহােম ইত্যাদি স্থানে বাংলাদেশ সরকারের মিশন স্থাপন করে। সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়ােগ দান করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নেতৃত্ব এবং জনসমর্থন আদায়ের জন্য কাজ করেন। ১০ এপ্রিল সরকার চারটি সামরিক জনে বাংলাদেশকে ভাগ করেন এবং চারজন সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করেন। ১১ ই এপ্রিল তা পুনঃনির্ধারিত করে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করেন। এছাড়াও বেশকিছু সাব-সেক্টর এবং তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠিত হয়। এসব বাহিনীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তা, সেনাসদস্য ,পুলিশ, ইপিআর, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যগণ যােগদান করেন। প্রতিটি সেক্টরে গেরিলা ও সাধারণ যােদ্ধা ছিল তাদেরকে মুক্তিযােদ্ধা বা মুক্তিফৌজ নামে ডাকা হতাে। এই মুজিবনগর সরকারের অধীনে সুষ্ঠভাবে যুদ্ধ পরিচালনা ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এটাই ছিল মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম।

মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগণ ও পেশাজীবীদের ভূমিকাঃ

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির উপরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমণ চালালে বাঙালি ছাত্র-জনতা পুলিশ এয়ার ফোর্স সাহসিকতার সাথে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। বিনা প্রতিরােধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাঙালিরা ছাড় দেয়নি।দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছে তারা বাংলাদেশের সূর্য সন্তান তাদেরকে কখনােই এ জাতি ভুলবে না। মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগণ | পেশাজীবীদের ভূমিকা ছিল অনেক বেশি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ পাশাপাশি মুক্তিযােদ্ধাদের খাবার ও লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।তারা দেশের জন্য জীবন দিতে কখনাে পিছুপা হয়নি এরাই জাতির সত্যিকারের দেশ প্রেমিক সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক, | ইপিআর, পুলিশ, আনসার, কৃষক, শ্রমিক ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।সবাই এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ফলে, এই যুদ্ধকে বলা হয় “গণযুদ্ধ বা “জন যুদ্ধ।

স্বাধীনতা অর্জনে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অবদান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রধান রাজনৈতিক দল হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ ছাড়াও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলাে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে ন্যাপ ভাসানী), ন্যাপ(মােজাফফর), কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় কংগ্রেস ইত্যাদি। এছাড়াও রাশিয়ার রাজনৈতিক দলের অবদান, চীনে পন্থী রাজনৈতিক দলের অবদান, ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের অবদান অস্বীকার করা যায় না।

মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাঃ

মুক্তিযােদ্ধা মানে লাল-সবুজের পতাকার সাথে সম্পর্কিত। এদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এদের অবদান কখনােই এ জাতীয় ভুলবে না। তাদের অসীম সাহসিকতায় পাকিস্তানির আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছি। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়। হারাতে হয়েছে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে এবং ২ লক্ষ মা-বােনের ইজ্জতকে। এ জাতি কখনােই এই অবদানকে ভুলতে পারে না। এটা কখনােই ভুলবার নয়।