সমাজকর্মের ক্ষেত্র গুলােকে চিহ্নিতকরণপূর্বক এটি পাঠে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি উন্নতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ

সমাজকর্মের ক্ষেত্র গুলােকে চিহ্নিতকরণপূর্বক এটি পাঠে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি উন্নতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ

সমাজকর্ম পঞ্চম সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন বুঝে পরবর্তী প্রশ্ন নং অনুযায়ী অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর সংগ্রহ করে এসাইনমেন্ট খাতায় নির্ভুলভাবে তুলে নিতে পারবে।

প্রশ্নঃ

অ্যাসাইনমেন্টঃ ০১

প্রথম অধ্যায়ঃ

সমাজকর্ম প্রকৃতি এবং পরিধি

অ্যাসাইনমেন্টঃ

সমাজকর্মের ক্ষেত্র গুলোকে চিহ্নিতকরণপূর্বক এটি পাঠে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি উন্নতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ।

নির্দেশনাঃ

  1. সমাজকর্মের ধারণা ও বৈশিষ্ট।
  2. সমাজকর্মের পরিধি ব্যাখ্যা।
  3. সমাজকর্ম পাঠের প্রয়ােজনীয়তা।
  4. ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নয়নে প্রতিরােধ, প্রতিকার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ভূমিকা।

এইচএসসি সমাজকর্ম পঞ্চম সপ্তাহ এসাইনমেন্ট উত্তর

প্রিয় এইচএসসি সালের পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী বৃন্দ, আর দেরি না করে চলুন দেখে নেয়া যাক পঞ্চম সপ্তাহের সমাজকর্ম অ্যাসাইনমেন্ট এর সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর

উত্তরঃ

সমাজকর্মের ধারণাঃ

সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর একটি সাহায্যকারী ও সক্ষমকারী পেশা, যা সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি ও সমষ্টি তথা মানুষকে এমনভাবে সাহায্য করে যাতে মানুষ তার বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেই নিজেদের সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়ে উঠে। সমাজকর্ম ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সম্পদ ও অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করে এবং সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। তাই সমাজকর্মকে empowering পেশা হিসেবে অভিহিত করা হয়। আধুনিক শিল্পসমাজের বহুমুখী ও জটিল সমস্যা মােকাবিলার জন্য সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব হয়েছে;যদিও পেশাদার তথা আধুনিক সমাজকর্মের শিকড় প্রথিত রয়েছে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় মধ্যে।

সমাজকর্ম একটি বিজ্ঞান ও কলা, যা ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা মােকাবিলায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাগত কর্মকাণ্ড পরিচলিত করে। শিল্পভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হওয়ার প্রেক্ষাপটে সমাজকর্ম পেশার আবির্ভাব হয়েছে। সমাজকর্ম সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যার সূচনা ও বিকাশ একদিনে হয়নি। বস্তুত সর্বজনীন মানবমর্যাদা ও মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখে মানবকল্যাণ নিশ্চিতকরণ প্রচেষ্টার একটি অংশ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান, মনােবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, নৃ-বিজ্ঞান, মনােচিকিৎসাসহ বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার জ্ঞান ও দক্ষতার সমন্বয়ে সমাজকর্ম একটি সমন্বিত ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

শিল্পবিপ্লবােত্তর সময়ে মানুষের জীবনযাত্রার সামাজিক ও অর্থনৈতিক গতিশীলতার পাশাপাশি সৃষ্টি হয় মনাে-সামাজিক সংকট ও সমস্যা। এই সংকট ও সমস্যা ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করলে প্রচলিত সমাজকল্যাণ ও সমাজসেবা অপ্রতুল, অপর্যাপ্ত ও অকার্যকর হয়ে উঠে। এই প্রেক্ষাপটে নতুনভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সাহায্য ও সেবামূলক ব্যবস্থা গড়ে তােলার প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়। এর ফলশ্রুতিতে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ভর পেশাগত কর্মকাণ্ড হিসেবে সমাজকর্মের সূচনা হয়।

ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম সমাজকর্মের সূত্রপাত হলেও আমেরিকায় পেশাদার সমাজকর্মের ধারণা, পদ্ধতি ও কৌশল পূর্ণতা লাভ করেছে।সমাজকর্মের বিকাশে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন তাঁরা হলেন জ্যান এডামস (Jane Addams) (১৮৬০-১৯৩৫), ম্যারী এ্যালেন রিচমণ্ড (Mary Ellen Richmond) (১৮৬১-১৯২৮) এবং উইলিয়াম হ্যানরি বিভারিজ (William Henry Beveridge) (১৮৭৯-১৯৬৩)। সমাজকর্ম মূলত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর একটি পেশাগত কর্মকাণ্ড, যা মানুষকে তার সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার সংরক্ষণ, সমৃদ্ধিকরণ, উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ও সক্ষম করে অনুকূল সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে।

সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্যঃ

সমাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য সমাজের কল্যাণ সাধনে সহায়তা করা। একটি সুখী ও সুন্দর সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে সমাজকর্ম দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সমাজকর্মের নিজ্ব কিছু লক্ষ্য আছে যার ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণীত হয়। সমাজবিজ্ঞানিগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজকর্মের লক্ষ্য সম্পর্কে আলােকপাত করেছেন।

সমাজকর্মের লক্ষ্য “বিজ্ঞান, কলা ও পেশা হিসেবে সমাজকর্মের লক্ষ্য মানুষকে এমনভাবে সাহায্য করা, যাতে প্রতিটি ব্যত্তি, দল ও সমষ্টি সামাজিক, মানসিক এবং দৈহিক কল্যাণের অধিকারী হতে পারে।স্কিউমাের ও থ্যাকারে এর মতে, সমাজকর্মের উদ্দেশ্য হলাে ব্যক্তি, পরিবার ও অন্যান্যদের মধ্যকার সুসম্পর্ক স্থাপনের বাধাসমূহ প্রতিরােধ ও দূর করা। প্রত্যেক মানুষের জীবন মানােন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যকার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বা পুনরুদ্ধারই সমাজকর্মের প্রধান লক্ষ্য। ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডার ১৯৮১ সালে সমাজকর্মের কয়েকটি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেন। যেমন:

ক. সমস্যা সমাধান, মােকাবিলা ও উন্নয়ন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ।

খ. জনগণকে সম্পদ, সাথে  সম্পৃক্তকরণ।

গ.কার্যকরী ও সেবা, মানবসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন।

ঘ. সামাজিক নীতির বিকাশ ও উন্নয়ন।

সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তাঃ

সমাজকর্ম হচ্ছে মানুষকে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তােলার অভিপ্রায়ে প্রতিশ্রুতিশীল একটি বহুমুখী পেশা। মানবজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা হতে অর্জিত জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, পেশাগত মূল্যবােধ ও দক্ষতাভিত্তিক ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান। সমাজের জটিল ও বহুমুখী সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরােধ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সমাজকর্ম শিক্ষা ও তার প্রয়ােগ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বর্তমান বিশ্বের বহুমুখী সমস্যার বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি, কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধান করে সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞানের গুরুত্ব উল্লেখযােগ্য।

সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে সমস্যা মােকাবিলায় বাস্তবমুখী ও যুগােপযােগী নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমাজকর্মের জ্ঞান বিশেষভাবে উপযােগী। সনাতন বদন্যতা নির্ভর সমাজকল্যাণ ব্যবস্থায় মানুষের সমস্যার সাময়িক ও তাৎক্ষণিক সমাধানে চেষ্টা চালানাে হয়। এতে করে প্রকৃতপক্ষে মানুষের সমস্যার কোনাে সমাধান হয় না বললেই চলে।

অন্যদিকে আধুনিক সমাজকর্ম টিমওয়াক অ্যাপ্রােচের (team work approach) মাধ্যমে উপযােগী পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়ােগ করে মানুষের সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী সমাধানে প্রচেষ্টা চালায়। তাই বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।দারিদ্র্য, জনসংখ্যাস্ফীতি, নিরক্ষরতা, মাদকাসক্তি, পারিবারিক বিশৃংখলা, অপরাধ, কিশাের অপরাধ, মানব পাচার, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যার কার্যকর মােকাবিলায় সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে চিকিৎসা, আইন, প্রকৌশল প্রভৃতি পেশার মতাে সমাজকর্ম পেশাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়। সেসব দেশে সমাজকর্মে ডিগ্রিধারীরা রেজিষ্ট্রেশন ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে সমাজকর্মের পেশাগত অনুশীলন করেন; যা সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তাকেই তুলে ধরে।

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে এখন পর্যন্ত ইউরােপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সমাজকর্মে উচ্চশিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।উন্নত বিশ্বের দেশসমূহে মনাে-সামাজিক সমস্যা যেমন- দাম্পত্য কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, হতাশা, মানসিক দ্বন্দ্ব, আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি ইত্যাদি সমাধানে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে আর্থ-সামাজিক সমস্যা যেমন- দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অপরাধ ও কিশাের অপরাধ ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে অদ্যবধি আমেরিকা, ইউরােপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রায় দুই হাজারের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্মে উচ্চ শিক্ষা চালু রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রতি বছর পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী সমাজকর্মে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। সমাজকর্মে উচ্চ শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা বিবেচনা করে জাপানের টোকিওতে কলেজ অব সােশ্যাল ওয়ার্ক নামে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চীনে ২০০৯ সালে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগ খােলা হয়েছে এবং ২০১২ সাল থেকে ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি প্রােগ্রাম চালু রয়েছে; যা সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা তুলে ধরছে। বাংলাদেশেও উচ্চ মাধ্যমিক, ঘাতক, স্নাতকোত্তর, এম.ফিল ও পিএইচ.ডি, পর্যায়ে সমাজকর্ম শিক্ষা চালু রয়েছে।বাংলাদেশে পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় একশতটির মতাে কলেজে সমাজকর্মে স্নাতক প্রােগ্রাম চালু আছে।

সমাজকর্মের পরিধি ও প্রয়ােগমাত্রা বিশ্লেষণ করলেই এর গুরুত্ব সম্পর্কে অনুধাবন করা যায়। সমাজকর্ম মানুষ ও তার পরিবেশের মধ্যে আন্তঃক্রিয়ার উন্নয়নে পেশাগত সাহায্য প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।এ লক্ষ্যে পরিকল্পিত পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে তাদের নিজস্ব সমস্যা নিজেদেরকেই সমাধানে সক্ষম করে তােলা হয়। সমাজকর্ম অনুশীলনে পরিকল্পিত প্রতিনিধি হিসেবে সমাজকর্মীরা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে মানুষের সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে, যা যেকোন সমাজব্যবস্থার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, জ্ঞান ও কৌশলের সমন্বয়ে একটি আধুনিক সমন্বিত সামাজিক বিজ্ঞান, যা ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে কাঙ্খিত সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তােলে।সুতরাং অসুবিধাগ্রস্ত (disadvantaged), দুস্থ (destitute) তথা অনগ্রসর (backward) জনগােষ্ঠীর সমস্যার দীর্ঘ স্থায়ী সমাধানে সমাজকর্ম পেশার আবশ্যকতা রয়েছে। সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত, দরিদ্র তথা পিছিয়ে পড়া জনগােষ্ঠীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার সুরক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ও দক্ষতা ক্ষেত্রেও সমাজকর্ম ফলপ্রসূ।

সমাজকর্মের পরিধি:

সমাজকর্মের পরিধি বলতে সাধারণত সমাজকর্মের অনুশীলন বা প্রয়ােগক্ষেত্রকে (fields of social work practice) বােঝায়। সমাজকর্মের ব্যবহারিক বা প্রায়ােগিকদিক নিয়েই এর পরিধি নির্ধারিত হয়। পেশা হিসেবে সমাজকর্ম মানুষকে তার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকরভাবে আন্তঃক্রিয়ায় সাহায্য করে, তাই এর পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত।

এ প্রসঙ্গে R. A. Skidmore এবং M. G. Thackeray বলেন, “বৃহৎ দৃষ্টিকোণ হতে সমাজের অধিক সংখ্যক মানুষের দৈহিক, মানসিক, আবেগীয়, আধ্যাত্মিক ও আর্থিক প্রয়ােজনপূরণ এবং কল্যাণ সাধনই সমাজকর্মের অন্তর্ভূক্ত।” (Social work, in a broad sense, encompasses the well being and interests of large number emotional, spiritual and economic needs.)

a since at Elizabeth Wickenden বলেন, “সমাজকর্মের অন্তর্ভুক্ত হলাে সেসব আইন, কর্মসূচি, সুযােগ-সুবিধা ও সেবামূলক কার্যক্রম, যেগুলাে জনগণের কল্যাণের জন্য স্বীকৃত মৌলিক প্রয়ােজনাদি পূরণের নিশ্চয়তা বিধান বা জোরদার ও উত্তম সামাজিক শৃংঙ্খলা রক্ষায় নিয়ােজিত।” (Social Work includes those laws, programs, benefits and services which assure or strengthen provisions for meeting social needs recognized as basic to the wellbeing of the population and the better function of the social order.)

সমাজকর্ম পেশার  Movement কর্যক্রমগুলাে কতগুলাে ধারা (dimensions) যেমন-

যত্ননির্ভর (caring),

প্রতিকারধর্মী (curing),

পরিবর্তনমূলক (changing),

সেবামূলক (servicing)

ও ক্ষমতায়নমূলক (empowering)

সমাজকর্মের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হচ্ছে মানুষ ও তার পরিবেশ (environment) এবং এমনকি প্রতিবেশ (ecology), যা মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সমাজ ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে সমাজকর্ম আলােচনা করে থাকে। সামাজিক সমস্যার স্বরূপ, প্রকৃতি, কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণে প্রয়ােজন সামাজিক গবেষণা। তাই সমাজকর্মের বিস্তৃত পরিধির আওতায় সামাজিক গবেষণা অন্তর্ভুক্ত।

সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য। সামাজিক নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ব্যতীত সামাজিক সমস্যা মােকাবিলা করে সামাজিক উন্নয়ন আনয়ন সম্ভব নয়। এজন্য সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন সমাজকর্মের পরিধিভুক্ত। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, সমাজ সংস্কার, সমষ্টি উন্নয়ন, সংশােধনমূলক কার্যক্রম ও মানব সম্পদ উন্নয়ন সমাজকর্মের আওতাভুক্ত।

সমাজকর্মের পরিধি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে Brenda DuBois এবং Karla Krogsrud Miley (১৯৯২) তাঁদের “Social Work:An Empowering Profession” গ্রন্থে উল্লেখ করেন, পরিবার ও শিশুদের সেবা (family and children’s services), স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন (health and rehabilitation), মানসিক স্বাস্থ্য (mental health), তথ্য ও প্রেরণ (information and raferral), জীবিকাভিত্তিক সমাজকর্ম (occuption social work), কিশাের ও অপরাধী সংশােধন juvenile and adult corrections), বয়স্ক বা প্রবীণ সেবা (gerotogical services), স্কুল সমাজকর্ম (school social work), বাসস্থান (housing), আয় নির্বাহ (income maintnance) এবং সমষ্টি উন্নয়ন (community development) হচ্ছে সমাজকর্মের প্রধান অনুশীলনক্ষেত্র।

সামাজিক সমস্যার স্বরূপ, প্রকৃতি, কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণে প্রয়ােজন সামাজিক গবেষণা। তাই সমাজকর্মের বিস্তৃত পরিধির আওতায় সামাজিক গবেষণা অন্তর্ভুক্ত। সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য। সামাজিক নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ব্যতীত সামাজিক সমস্যা মােকাবিলা করে সামাজিক উন্নয়ন আনয়ন সম্ভব নয়। এজন্য সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন সমাজকর্মের পরিধিভুক্ত। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, সমাজ সংস্কার, সমষ্টি উন্নয়ন, সংশােধনমূলক কার্যক্রম ও মানব সম্পদ উন্নয়ন সমাজকর্মের আওতাভুক্ত।

আমেরিকার জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি (NASW) প্রকাশিত Encyclopedia of Social Work-এ সমাজকর্মের নিম্নোক্ত din Hria ক্ষেত্রসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে:

১. মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরােধ ও চিকিৎসা সেবা (Services for control, prevention, and treatment of drug addiction);  ২. বয়ষ্ক সেবা (Services foraging);

৩. শিশু ও পরিবার কল্যাণ সেবা (Child and family welfare services)

৪. সমষ্টির কল্যাণ ও মানবসেবা পরিকল্পনা (Community welfare and planning human for services)

৫. অপরাধ ও কিশাের অপরাধী সংশােধন সেবা (Correctional services for crime and delinquency)

৬. প্রতিবন্ধী ও দৈহিক প্রতিবন্ধী সেবা (Services for disability * রবা (Educational and physical handicap)

৭. সমাজকর্ম পেশার উন্নয়নে শিক্ষা services for professional development of social work)

৮. পরিবেশ এবং সামাজিক পরিকল্পনা (Environment and social planning)

৯. পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা পরিকল্পনা (Family planning and population planning)

১০. পরিবারিক সেবা পারিবারিক শিক্ষা, পরামর্শ (Family services- family life education, counseling)

১১. স্বাস্থ্য সেবা-কমিউনিটি মানসিক স্বাস্থ্য, প্রজনন পরামর্শ, স্বাস্থ্য ও হাসপাতাল পরিকল্পনা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য), জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি (Health services- community mental health, genetic counseling, health and hospital planning maternal and child health, public health program)

১২. গৃহায়ন ও গৃহকেন্দ্রিক সেবা (Housing and homemaker services)

১৩. মানসিক স্বাস্থ্য এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। mental health and retardation and resettlement

১৪. অভিবাসী পুনর্বাসন সেবা

১৫. প্রতিবেশি সেবা

১৬. শিশু ও প্রবীণ সংরক্ষণ সেবা (Protective services for children and adults)

১৭. সরকারি সমাজকল্যাণ সেবা (Public welfare service)

১৮. সামাজিক সাহায্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা সেবা (Public assistance and social security services)

১৯. চিত্তবিনােদন এবং পরিবেশ উন্নয়ন পরিকল্পনা (Recreation and environmental planning)

২০. সমাজকর্ম গবেষণা (Research in social work)

২১. বিদ্যালয় সমাজকর্ম (School social work)

২২. সামাজিক নীতি উন্নয়ন (Social policy development)

২৩. যুবসেবা এজেন্সী এবং কর্মসূচি (Youth service agency and programs)

২৪. শ্রমকল্যাণ, শিল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সমাজকর্ম সেবা (Social work services in labour, business and industry)

২৫. সংখ্যালঘু সেবা (Services for minorities)

২৬. পল্লী সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান (Rural social services agency)

কানাডার মন্ট্রিলে ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত International Federation of Social Workers (IFSW) এর সাধারণ সভায় সমাজকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যক্তি সমস্যা, সমাজে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা, বৈষম্য, অবিচারসহ প্রভৃতি সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করা হয়।সমাজকর্ম পেশা মানবকল্যাণ ব্যবস্থা জোরদারকরণ, দারিদ্র বিমােচন, মানব নির্যাতন ও মানব বঞ্চনা অবসানসহ মৌলমানবিক চাহিদা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ।

সমাজকর্ম সকল শ্রেণীর মানুষের কল্যাণে গবেষণাধর্মী একটি পেশা হিসেবে প্রতিকার, প্রতিরােধ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, যা সমাজ র্মের পরিধিভুক্ত। এ প্রসঙ্গে Armondo T. Morales 47 Bradford W. Sheafor (1986: 119) TTA, “Field of social work practice is a phrase used to describe a group of practice setting that deal with similiar client problems.”