পরমাণুর মডেল ও ইলেকট্রন বিন্যাস

2023 সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য এসাইনমেন্ট সমাধান সহ প্রকাশিত হয়েছে ।

বিষয: রসায়ন প্রথম পত্র

দ্বিতীয় অধ্যায় গুণগত রসায়ন

প্রদত্ত প্রশ্ন: পরমাণুর মডেল ও ইলেকট্রন বিন্যাস।

শিখনফল /বিষয়বস্তু: পরমাণুর রাদারফোর্ড ও বোর মডেলের তুলনা করতে পারবে।

কোয়ান্টাম সংখ্যা, বিভিন্ন উপস্তর ও ইলেকট্রন ধারণক্ষমতা ব্যাখ্যা করতে পারবে।

কোয়ান্টাম উপর স্তরের শক্তিক্রম আকৃতি ব্যাখ্যা করতে পারবে।

আউফবাউ খন্ড পাউলির বর্জন নীতি প্রয়োগ করে ইলেকট্রন বিন্যাস নির্ণয় করতে পারবে।

নির্দেশনা: পরমাণুর মডেল বর্ণনা করা।

কোয়ান্টাম সংখ্যার সমূহ বর্ণনা করা।

কোয়ান্টাম সংখ্যা থেকে পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তরের ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা নির্ণয় করা।

পরমাণুর উপশক্তিস্তরে ইলেকট্রন বিন্যাসের নীতি ব্যাখ্যা করা।

পরমাণুর মডেল ও ইলেকট্রন বিন্যাস

বিভিন্ন পরমাণু মডেল

পরমাণুবাদঃ

১। ডাল্টনের পরমাণুবাদঃ-

১৮০৩ সালে ইংরেজ পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানী জন ডাল্টন পরমাণু সম্পর্কে একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন যা ডাল্টনের পরমাণুবাদ নামে পরিচিত। তাঁর প্রদত্ত পরমাণুবাদ পাঁচটি স্বীকার্যে বিভক্ত। এই স্বীকার্য পাঁচটি হলো–

I) পদার্থ অতি ক্ষুদ্র কণাসমূহ দ্বারা গঠিত, এই কণাগুলোর নাম পরমাণু।

ii) একই পদার্থের পরমাণুসমূহের আকার, ভর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য একই রকম হয়, ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের পরমাণুসমূহের আকার, ভর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ভিন্নরকমের হয়।

iii) পরমাণুসমূহ বিভাজিত, সৃষ্টি বা ধ্বংস হতে পারে না।

iv) সরল পূর্ণসংখ্যক অনুপাতে বিভিন্ন পদর্থের পরমাণু সংযুক্ত হয়ে রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি করে।

v) রাসায়নিক বিক্রয়াসমূহে পরমাণু সংযোজিত, বিভক্ত বা পুনর্বিন্যাসিত হয়।

১৮ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ডাল্টনের স্বীকার্যসময়হকে বিজ্ঞানীরা মেনে নিয়েছিলেন। কারণ স্বীকার্যসমূহ অস্বীকার করার মতো যথেষ্ঠ তথ্য তাদের ছিল না। ১৮৯৭ সালে জে জে থমসন ইলেক্ট্রন আবিষ্কার করেন। এর ফলে ডাল্টনের তৃতীয় স্বীকার্যের অংশবিশেষ (পরমাণু বিভাজিত হতে পারে না) ভুল প্রমাণিত হয়।

২।থমসন পরমাণু মডেলঃ-

১৮৯৮ সাথে বিজ্ঞানী জে জে থমসন এই মডেল প্রস্তাব করেন। এই মডেল অনুসারে পুডিংয়ের ভিতর কিশমিশ যেমন বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকে পরমাণুতে ঠিক তেমনি নিরবচ্ছিন্নভাবে বন্টিত ধনাত্মক আধানের মধ্যে ইলেক্ট্রন ছড়িয়ে আছে।

৩। রাদারফোর্ডের পরমাণুবাদঃ-

১৯০৯ সালে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড আলফা কণিকা বিক্ষেপণ পরীক্ষা সম্পাদন করেন। পরীক্ষালব্দ্ধ ফলাফল থেকে ১৯১১ সালে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক আধানযুক্ত অত্যন্ত ভারী একটি মূলবস্তু আছে। একে পরবর্তিতে নাম দেওয়া হয় নিউক্লিয়ার্স। পরমাণুর বাকি অংশ জুড়ে রয়েছে ইলেক্ট্ন আর ইলেক্ট্ন গুলো নিউক্লিয়ার্সকে কেন্দ্র করে ঘুরছে

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলঃ-

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেল, ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড সৌরমন্ডলের সাথে সাদৃশ্য রেখে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে নিজস্ব মতবাদ উপস্থাপন করেন। এ মতবাদটিকে রাদারফোর্ডের সোলার সিস্টেম এটম মডেল বলা হয়ে থাকে। এ মতবাদের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলোঃ

১. সকল পরমাণু অতিশয় ক্ষুদ্র গোলাকৃতি কণা। এর দুটি অংশ রয়েছে যথা:

(ক) কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস এবং

(খ) কেন্দ্র বহির্ভূত অঞ্চল।

২. পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারী বস্তু বিদ্যমান। এই ভারী বস্তুকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলে। পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগণ্য।

৩. পরমাণুর প্রায় সবটুকু ভর এর নিউক্লিয়াসে পুঞ্জীভূত। তাই মোটামুটিভাবে নিউক্লিয়াসের ভরই পারমাণবিক ভর।

৪. সৌরমন্ডলে সূর্যের চারদিকে আবর্তনীয় গ্রহসমুহের মত পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে কক্ষপথে কতগুলো ঋণাত্মক কণিকা সর্বদা ঘূর্ণায়মান থাকে। এদের ইলেকট্রন বলে।

৫. পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ। তাই পরমাণুতে ধনাত্মক চার্জের সংখ্যা এবং পরিক্রমণশীল ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনের সমান।

৬. নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের মধ্যে বিরাজিত কেন্দ্রমুখী স্থির বিদ্যুৎ আকর্ষণ বল ও ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রবিমুখী বলের মান সমান ও বিপরীতমুখী।

৪।নীল্‌স বোরের পরমাণুবাদঃ-

১৯১৩ সালে ডেনমার্কের পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর তাঁর পরমাণু মডেলের জন্য দুটি প্রস্তাব রাখেন যা বোরের স্বীকার্য নামে পরিচিত।

স্থায়ী অবস্থা স্বীকার্য (Postulates of Stationary States)
কম্পাঙ্ক স্বীকার্য (Postulates of Frequency)

পরমাণুতে ইলেকট্রন বিন্যাসঃ-

কোন পরমাণুর নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্ট্রন ঐ পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তরের অন্তর্ভুক্ত নির্দিষ্ট উপশক্তিস্তরের বিভিন্ন অরবিটালে নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জিত থাকে, ইলেক্ট্রনের এই সজ্জাকে পরমাণুর ইলেক্ট্রন বিন্যাস বলে। ইলেক্ট্রন বিন্যাস পলির বর্জন নীতি, আউফবাউ নীতি ও হুন্ডের নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।

পলির বর্জন নীতিঃ-

একটি পরামাণুতে দুটি ইলেক্ট্রনের চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার মান কখনও একই হতে পারে না। অন্ততপক্ষে একটির মান দুটি ইলেক্ট্রনের বেলায় ভিন্ন হতে হয়।

বিস্তারিত পরবর্তী ভার্সনে দেওয়া হবে

আউফবাউফ নীতিঃ-

পরমাণুতে ইলেক্ট্রনসমূহ বিভিন্ন শক্তিস্তর দখলের সময় প্রথমে সবচেয়ে কম শক্তিসম্পন্ন স্তরে অবস্থান গ্রহণ করবে, নিম্ন শক্তিস্তর পূর্ণ হওয়ার পর পরবর্তী অপেক্ষাকৃত উচ্চতর শক্তি সম্পন্ন স্তরে গমন করবে।
বিস্তারিত পরবর্তী ভার্সনে দেওয়া হবে

হুন্ডের সূত্রঃ-

একই শক্তি সম্পন্ন বিভিন্ন অরবিটালে ইলেক্ট্রনসমূহ এমনভাবে প্রবেশ করে যেন তারা সর্বাধিক পরিমাণে অযুগ্ম বা বিজোড় অবস্থায় থাকতে পারে, এ অযুগ্ম ইলেক্ট্রনসমূহের স্পিন বা ঘূর্ণন একইমুখী হবে। এখানে একই শক্তি সম্পন্ন বিভিন্ন অরবিটাল বলতে ৩টি p অরবিটাল, ৫টি d অরবিটাল ও ৭টি f অরবিটালকে বোঝানো হয়েছে। উল্লেখ্য যে s অর্বিটালের জন্য হুন্ডের সূত্র প্রযোজ্য নয়।