পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া বাংলায় (মহিলা ও পুরুষ)

গোসল বা ওজু বা তায়াম্মুম করে পাক-পবিত্র হবেন। সাংসারিক চিন্তা-ভাবনা ভুলে একমাত্র প্রতিপালক আল্লাহ দিকে মনোনিবেশ করে কেবলামুখী (পশ্চিমমুখী) হয়ে দাড়াবেন। নামাজের নিয়ত করিবেন (নিয়ত করা জরূরী পড়া নয়) আল্লাহ আকবার- বলে উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে কান স্পর্শ করে হাত বাঁধবেন। হাত বাঁধার জন্য বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে, ডান হাতের কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা বাম হাতের কব্‌জি ধরবে এবং ডান হাতের বাকি তিনটি আঙ্গুল বাম হাতের উপর প্রসারিত থাকবে।

এবার চুপে চুপে সানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহাম-দিকা ওয়াতাবারাকাসমুকা ওয়াতা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা) পাঠ করবেন। আউ’জু বিল্লাহি মিনাস শয়তানির রাযিম। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম- পাঠ করিবেন। এরপর সূরা ফাতেহা পাঠ করবেন। সূরা ফাতেহা নিচে দেওয়া হয়েছে। এবার অন্য একটি সূরা পাঠ করবেন। তবে যদি ইমামের পিছনে নামাজ পরেন তাহলে চুপ করে থাকবেন। সূরাসমূহ নিচে দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ আকবার বলে রুকুতে যাবেন। রুকুর সময় দু হাত হাঁটুর উপর এমনভাবে রাখবেন যেন গিরার উপর ভর পরে। মাথা, ঘাড় ও পিঠ এক বরাবর থাকবে। রুকুতে থাকা অবস্থায় তিন বার অথবা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক বেজোর বার রুকুর তাসবীহ অর্থাৎ সূবাহানা রাব্বিয়াল আযীম- এই দোয়া পাঠ করবেন। রুকুর তাসবীহ পাঠ শেষে সোজা হয়ে দাড়াবেন।

রুকুর তাসবীহ পাঠ শেষে সোজা হয়ে দাড়াবেন এবং সামি আল্লাহুলিমান হামিদা এবং রাব্বানা লাকাদ হামদ্‌- বলবেন। তবে ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে ইমাম প্রথমে- সামি আল্লাহুলিমান হামিদা- বলবেন, এরপর আপনি শুধু -রাব্বানালাকাদ হামদ্‌- বলবেন।

এবার আল্লাহ আকবার বলে সিজাদায় যাবেন। সিজদার সময় কপাল, নাক, দুই হাত, হাঁটু ও দুই পা মাটির স্থিরভাবে লেগে থাকবে। সিজদায় থাকা অবস্থায় তিন বার বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক বেজোর বার সিজদার তাসবীহ অর্থাৎ সূবাহানারাব্বিয়াল আলা- এই দোয়া পাঠ করবেন। এরপর সিজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসবেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং পূর্বের ন্যায় সিজদার তাসবীহ পাঠ করবেন। দ্বিতীয় সিজদা শেষ হলে সোজা হয়ে দাড়াবেন।

দ্বিতীয় রাকাত

এবার প্রথম রাকাতের নিয়মে সূরা ফাতেহা ও তার সাথে অন্য সূরা (ইমামের পিছনে হলে চুপ থাকবেন) পাঠ করবেন। এরপর রুকু ও সিজদা শেষ হলে বসুন এবং তাশাহুদ পাঠ করুন। এরপর নামাজ যদি দুই রাকাতের হয় তবে দরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করুন। আর নামাজ যদি তিন বা চার রাকাতের হয় তবে শুধু তাশাহুদ পাঠ শেষে উঠে দাড়ান এবং বাকি নামাজ শেষ করুন।

এক্ষেত্রে সুন্নত নামাজ হলে বাকি রাকাতসমূহ পূর্বের ন্যায় শেষ করতে হবে। আর যদি ফরজ নামাজ হয় তাহলে শুধু সূরা ফাতেহা পাঠ করতে হবে অর্থাৎ বাকি রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য কোনো সূরা পাঠ করতে হবে না। শেষ রাকাতে সিজদা শেষে বসে যথাক্রমে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করুন। তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা নিচে দেওয়া হয়েছে।

শেষ রাকাতে দোয়া মাসুরা পাঠ শেষ হলে প্রথমে ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে সালাম ফিরান অর্থাৎ বলুন – আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। এরপর বাম দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলুন – আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। এভাবে নামাজ শেষ করুন।

ফজরের নামাজে সালামের পর এই দুয়া পড়া

اللهم إني أسألك علما نافعا ، ورزقا طيبا ، وعملا متقبلا

হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, উত্তম রিযক এবং কবুল হওয়া আমল প্রার্থনা করি।

আয়েশা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তাকবীর দিয়ে নামাজ শুরু করতেন। সূরা ফাতিহা পড়তেন। যখন তিনি রুকুতে যেতেন মাথা উপরের দিকেও রাখতেন না আবার একেবারে সোজাও করতেন না, বরং এ দুয়ের মাঝামাঝি পর্যায়ে রাখতেন। যখন তিনি রুকু থেকে উঠতেন সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সিজদায় যেতেন না

আর যখন তিনি সিজদা থেকে উঠতেন তখন সোজা হয়ে না বসে দ্বিতীয় সিজদায় যেতেন না। তিনি প্রতি দু রাকাত পরপর আত্তাহিয়াতু পড়তেন। তিনি বাম পা বিছিয়ে দিতেন ও ডান পা দাঁড় করিয়ে রাখতেন। তিনি শয়তানের ন্যায় উপবেসন থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিতেন। আর হিংস্রপ্রাণী যেভাবে দু বাহু জমিনে বিছিয়ে রাখে সেভাবে মুসল্লী ব্যক্তির দু বাহু জমিনে বিছিয়ে রাখতে বারণ করতেন। আর তিনি সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করতেন। -(বর্ণনায় মুসলিম)

শয়তানের ন্যায় উপবেসন করার অর্থ হলো নিতম্বের ওপর বসে দু পা সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা এবং দু হাত মাটিতে রাখা ঠিক কুকুরের বসার মতো।

নামাজ শেষে নিচের দোয়াটি কমপক্ষে একশত বার পড়া উত্তম:

“সুব্‌হানাল্লাহি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, লা হা’ওলা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহিল্‌ আলীয়্যিল আযীম”।

মুনাজাত : মুনাজাতের মাধ্যমে বান্দার বন্দেগি ও আল্লাহর রবুবিয়াতের প্রকাশ ঘটে। বান্দাহ তার প্রভূর কাছে চায়। প্রভূ এতে ভীষণ খুশি হন। মহন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি তার কাছে না চাইলে অসস্তুষ্ট হন। ‘যে আল্লাহর নিকট কিছু চায় না আল্লাহ তার উপর রাগ করেন’- (তিরমিযি)। ‘দোয়া ইবাদতের মূল”- (আল হাদিস)।’ যার জন্য দোয়ার দরজা খোলা তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা রয়েছে’- (তিরমিযি)। কাজেই আমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করব, ক্ষমা চাইব, রহমত চাইব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইব।

নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া

পূর্ণাঙ্গ নামাজের নিয়ম

নামাজ পড়ার নিয়ম ও সূরা

নামাজ পড়ার নিয়ম মহিলাদের

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা

মহিলাদের বসে নামাজ পড়ার নিয়ম

নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম সহীহ হাদিস

নামাজের নিয়ম অর্থ সহ