মেসির বিশ্বকাপ জয়ের পেছনের করুন ইতিহাস জানলে শরীর শিউরে উঠবে

২০০৬ বিশ্বকাপ, হোসে প্যাকারমেনের আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ অভিষেক হল মেসির। ডিয়েগো ম্যারাডোনা যার আদর্শ, বিশ্বকাপ জয় যার স্বপ্ন। তিন ম্যাচে এক গোলও করলেন, জার্মানীর সাথে হেরে যাওয়া ম্যাচে হোসে প্যাকারমেন নামালেন না মেসিকে, অনেকে আজো আফসোস করেন এ নিয়ে।

২০০৭ কোপা আমেরিকা

কোপা আমেরিকায় বেস্ট ইয়াং প্লেয়ার হলেন। ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে হার। তখনো কেউ জানে না, চারটা ফাইনালের প্রথম ফাইনালে হার এটা।

২০১০ বিশ্বকাপ

ডিয়েগো ম্যারাডোনা কোচ হয়ে এসেছেন, মেসিও ততোদিনে দলের প্রধান খেলোয়াড়। দুই লিজেন্ডের মেলবন্ধনে বিশ্বকাপ আসবে আশা করেছিলো সমর্থকেরা, হলো না জার্মানীর কাছে হারে। এই হারের পর আর্জেন্টিনার সমর্থকদের অনেকেই বললো, সে ম্যারাডোনা হতে পারবে না, মাঠে খালি হাঁটে খেলে না আরো কত কী। আর যারা হেটার, তারা তো কত কিছুই বললো।

See: বিশ্বকাপ জয় করার পর মেসি

২০১৪ বিশ্বকাপ

স্বপ্নপূরণের একদম দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিলেন মেসি। ডি মারিয়া ফাইনাল মিস করলেন, মেসিও বিশ্বকাপ মিস করলেন। বিশ্বকাপ ফাইনালের দিকে তাকিয়ে থাকা মেসির করুণ দৃষ্টিতে মন খারাপ হয়নি, এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ২য় ফাইনালে হার।

২০১৫ কোপা আমেরিকা

এবার ফাইনালে চিলির সামনে মেসি। টাইব্রেকারে লক্ষ্যভেদ করলেও হিগুয়েন আর বানেগার মিসে টানা তৃতীয় ফাইনালে হার। এই হারের পর মেসিকে সবাই বলা শুরু করলো ক্লাব লিজেন্ড, খেলাটা আসার সময় বার্সায় রেখে আসে৷ দলের প্রতি নিবেদন নেই।

২০১৬ কোপা আমেরিকা

আবারো ফাইনাল, আবারো চিলি। ততোদিনে মেসির ছোট কাঁধে পাহাড় সমান চাপ৷ প্রায়ই খেলার মাঝে বমি করছেন, প্রচন্ড টেনশন আর নিতে পারছিলেন না। ফাইনালে অবিশ্বাস্য পেনাল্টি মিস। আবার হার। টানা চতুর্থবার। এবার আর সহ্য করতে পারলেন না মেসি। কেঁদে ফেললেন, যে কান্নার ছবি নিয়ে পরবর্তী পাঁচ বছর নির্মম কৌতুক হয়েছে।

মেসিকে বলা হলো ফিনিশড, বলা হলো ফ্রড, আর্জেন্টিনার হয়ে ইচ্ছা করেই নাকি মেসি খেলে না। অভিমানে, চাপে, ক্ষোভে, হাহাকারে অবসর নিলেন মেসি। এ নিয়েও হলো ট্রল, পালিয়ে গেছে লোকটা।

২০১৮ বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং এ বিপদে পড়লো আর্জেন্টিনা। দেশের বিপদে এগিয়ে এলেন মেসি। হ্যাট্রিক করলেন ইকুয়েডরের বিপক্ষে। বিশ্বকাপে তুললেন। গ্রুপ পর্বে পেনাল্টি মিস করলেন আইসল্যান্ডের সাথে। গ্রুপ রানার্সআপ হওয়ায় খেলা পড়লো ফ্রান্সের সাথে। ৪-৩ গোলে হেরে বিদায়।

২০২১ কোপা আমেরিকা

ভাগ্যদেবী অবশেষে মুখ তুলে তাকালেন। দেশের হয়ে প্রথম শিরোপা জিতলেন ব্রাজিলকে মারাকানায় হারিয়ে।

২০২২ বিশ্বকাপ

অবশেষে ইচ্ছাপূরণ, নিজের চক্রপূরণ। ২০১৫ সালে বলেছিলেন, বিশ্বকাপের বিনিময়ে ৫টা ব্যালন ডি অর দিয়ে দিবেন। স্পেনের হয়ে খেলেননি, খেললে হয়তো বহু আগেই শিরোপা পেয়ে যেতেন। দেশকে ভালোবেসেছেন। এরজন্যে কম রক্তাক্ত হন নি, আইডল ম্যারাডোনাও কথা শুনিয়েছেন, প্রত্যাশার চাপে পিষ্ট হয়েছেন, হার মানেননি।

আর্জেন্টিনা দলের পিক

পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে মেডেল নিয়ে যে পরম আদরে হাত বুলিয়ে চুমু দিলেন কাপে, এটা দেখে আমার ১৪ এর সেই মন খারাপ মেসির ছবিটা মনে পড়েছিলো। চোখের কোণে একটু জলও এসেছিলো। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের আরো অনেক বেশি হবার কথা।

এরপর কাপটা নিয়ে ছন্দময় পায়ে দলের সাথে এসে উদযাপন। সবশেষে বন্ধু আগুয়েরোর কাঁধে উঠে যাওয়া, সেটা যেনো বিশ্বচূড়ায় আরোহণ। ম্যারাডোনার দিকে তাকিয়ে বলা, আমি পেরেছি। সবার দিকে তাকিয়ে গ্ল্যাডিয়েটরের ম্যাক্সিমাসের মতো বলা, ” আর ইউ নট এন্টারটেইনড”?

মহাকাব্যের সমাপ্তি এভাবেই হয়। লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।