ভূ-প্রকৃতি ও বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম একটি বৃহৎ-ব দ্বীপ অঞ্চল। পদ্মা, যমুনা, ও মেঘনা নদী পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিক থেকে এদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। ভূমির বন্ধুরতার পার্থক্য ও গঠনের সময়ানুক্রমিক দিক থেকে বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতি কে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় ।
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ।
২, প্লাইস্টোসিনকালেরে সােপানসমূহ বা চত্বরভূমি ।
৩. সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি।
নিম্নে এদের সংক্ষিপ্ত আলােচনা উপস্থাপন করা হলাে:
বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতি
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ
রাঙ্গামাটি বান্দারবান খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকাগুলাে নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। সম্ভবত টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পবর্ত উথিত হওয়ার সময় মায়ানমারের দিক থেকে আগত গারজান আলােড়নের ধাক্কার ভাজগ্রস্ত হয়ে এসব পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এদের টারশিয়ারি পাহাড় বলা হয়। সংক্ষেপে বলা যায় যে টারশিয়ারি যুগের হিমালয় পর্বত গঠনের সময় এসব পাহাড় সৃষ্টি হয়েছিল বলে এগুলােকে টারশিয়ারি পাহাড় বলে। আবার অঞ্চলকে দুভাগে ভাগ করা যায়।
যথা- ১. উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ ও ২. দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ। উত্তর ও উত্তর পূর্বোঞ্চলের বলতে বুঝায় ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশ সিলেট জেলার উত্তর ও উত্তর পূর্বাংশ এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের দক্ষিণাংশের ছােট বড় বিচ্ছিন্ন পাহাড়গুলাে। দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ বলতে খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি ও বান্দাবান জেলা এবং চট্টগামের অংশ বিশেষ এ অন্তর্গত পাহাড় কে বুঝায়। এ পাহাড়গুলাের গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার।
২. প্লাইস্টোসিনকালের সােপানসমূহ
অনুমান করা হয় ২৫,০০০ বছর পূর্বে প্লাইস্টোসিনকালের আন্তবরফগলা পানিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়ে এসব চত্বরভূমি গতি হয়েছিল এর কয়েকটি অঞ্চল ছিল ।
(ক) বরেন্দ্র ভূমি
বরেন্দ্রভূমি রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৯৩২০ বর্গ কিলােমিটার এলাকা জুড়ে আছে। প্লাবন সমভূমি থেকে এর উচ্চতা ৬ থেকে ১২ মিটার। গভীর খাত বিশিষ্ট আঁকাবাকা ছােট ছােট কয়েকটি সােতস্বিনী এ অঞ্চলে রয়েছে।
(খ) মধুপুর ও ভাওয়াল গড়
উত্তরের ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত অর্থাৎ ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল ও গাজীপুর অঞ্চল জুড়ে এর বিস্তৃতি। এর মােট আয়তন ৪১০৩ বর্গ কিলােমিটার। মাটি কংকর মিশ্রিত ও লাল প্লাবন সমভূমি থেকে এর পূর্ব ও দক্ষিণে অংশের উচ্চতা ৬ মিটার কিন্তু পশ্চিম ও উত্তর দিকের উচ্চতা ৩০ মিটার। মধুপুর গড়ের অঞ্চলটি পাহাড়ের ক্ষয়িত অংশবিশেষ মধুপুর গড়কে অনেক বিশেষজ্ঞ নদী সােপান “আবার কেউ কেউ একে উথিত বা ব-দ্বীপ ও বলেন বরেন্দ্রভূমির মতাে তখনকার রঙ দেখতে লাল এবং বসবাসসহ বলে কৃষি কাজের উপযােগী নয়।
(গ) লাল মাই পাহাড়
কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কি. মি দক্ষিণে লালর মাই থেকে ময়নামতি পর্যন্ত এটি বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গ কিলােমিটার এবং গড় উচ্চতা ২১ মিটার। এর মাটি লালচে মুড়ি এবং বালি কংকর দ্বারা গঠিত। ৩, সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি ৪ টারশিয়ারী যুগের পাহাড়সমূহ এবং প্লাইস্টোসিন কালের সােপানসমূহ ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশ নদীবিধীত এক বিস্তীর্ণ সমভূমি অসংখ্য ছােট বড় নদী বাংলাদেশের সর্বত্র জালের মতাে ছড়িয়ে আছে সমতল ভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত বলে এ নদীগুলাে বন্যার সৃষ্টি করে দেশের অধিকাংশ অঞ্চল তখন জলমগ্ন হয়। বছরের পর বছর এভাবে বন্যার সাথে পরিবাহিত পলিমাটি সঞ্চিত হয়ে পলল সমভূমি গঠিত হয়। এর আয়তন প্রায় ১.২৪.২৬৬ বর্গ কিলােমিটার। বাংলাদেশের উত্তরাংশ থেকে সাগর উপকূলের দিকে সমভূমির ঢাল ক্ৰমনিম্ন। সুন্দরবন প্রায় সমুদ্র সমতলে অবস্থিত। কিন্তু সমুদ্র সমতল থেকে দিনাজপুরের উচ্চতা ৩৭.৫০ মিটার। বগুড়ার উচ্চতা ২০ মিটার। ময়মনসিংহের উচ্চতা ১৮ মিটার। সমভূমির স্থানে স্থানে বহু নিম্নভূমি বা জলাশয় দেখতে পাওয়া যায়। সমভূমির পরিত্যক্ত অশ্বক্ষুরাকৃতি নদীখাল বা ভূ-পৃষ্টের অবনমনের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। আরএ অঞ্চলটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত-
[সপ্তাহ-১১] এইচএসসি 2022 ভূগোল ১ম পত্র এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও সমাধান