যেকোন দ্রবনের প্রতি মোল দ্রব থেকে উৎপন্ন আয়নসমূহের উপযুক্ত ঘাতসহ ঘনমাত্রার গুনফলকে আয়নিক গুনফল বলে। আয়নিক গুনফল যেকোন দ্রবনের জন্য হলেও দ্রাব্যতা গুনফল শুধুমাত্র সম্পৃক্ত দ্রবনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আয়নিক গুনফলের মান মোলার ঘনমাত্রার উপর নির্ভর করে।আর দ্রাব্যতা গুনফল একটি স্থির সংখ্যা।
দ্রবণের আয়নিক গুণফল বলতে কী বোঝায় দেখ : “নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো আয়নিক যৌগের দ্রবণে ঐ যৌগের সংগঠক আয়নসমূহের যথোপযুক্ত ঘাতসহ মোলার ঘনমাত্রার গুণফলকে ঐ তাপমাত্রায় যৌগটির আয়নিক গুণফল বলে”।
এবার আবার রিপিট করি দ্রাব্যতা গুণফল এর সংজ্ঞাটা : “নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো আয়নিক যৌগের সম্পৃক্ত দ্রবণে ঐ যৌগের সংগঠক আয়নসমূহের যথোপযুক্ত ঘাতসহ মোলার ঘনমাত্রার গুণফলকে ঐ তাপমাত্রায় যৌগটির দ্রাব্যতা গুণফল বলে”।
কোনো পার্থক্য খুঁজে পেলে? পার্থ্যক্যটা হল আয়নিক গুণফলের সংজ্ঞায় “সম্পৃক্ত” কথাটা বাদ গেছে। অর্থাৎ আয়নিক যৌগের যেকোনো দ্রবণের ক্ষেত্রে আয়নিক গুণফল বের করা যায়। দ্রবণ যখন সম্পৃক্ত হয়, তখনই আয়নিক গুণফলের নতুন নাম “দ্রাব্যতা গুণফল” দিই আমরা। আয়নিক গুণফল বের করা যায় ঠিক দ্রাব্যতা গুণফলের মত করেই, সংজ্ঞা আমাদের তো সেটাই শেখায়
আয়নিক গুণফলকে Qsp দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এই Qsp এর সাথে Ksp এর তুলনা করে সহজেই আমরা বলে দিতে পারি দ্রবণ এখন কোন অবস্থায় বিরাজ করছে। নিচের ছবিটা দেখ।
অর্থাৎ, Qsp , Ksp কে অতিক্রম করার অর্থই হল বাড়তি যে পরিমাণ আয়নগুলো দ্রবণে আছে, তা তলানি হিসেবে পড়বে ?
এবার দেখা যাক তৃতীয় সমস্যাটা কী বলে।
তোমাকে লেড ক্লোরাইডের Ksp দিয়ে দিয়েছে এখানে, তারমানে ওরা চায় মিক্সিং এর পর যে লেড ক্লোরাইড উৎপন্ন হবে তার জন্য Qsp এর মান নির্ণয়পূর্বক তুমি তুলনা করে ওদের বলে দাও অধঃক্ষেপ পড়বে কি পড়বে না।
এখানে আরেকটা জিনিস বোঝানোর আছে, সেটা হল দুই দ্রবণের মিশ্রণ ঘটার পর লেড আয়ন আর ক্লোরাইড আয়নের ঘনমাত্রা কিন্তু একই থাকবে না। প্রথমে আয়তন V ছিল, পরে সময়ায়তন অন্য দ্রবণ যোগে আয়তন হয়ে গেল 2V, যার কারণে এদের ঘনমাত্রাতেও এল পরিবর্তন। আমরা ঐ ফাইনাল দ্রবণে এই আয়নগুলোর ঘনমাত্রা নির্ণয় করতে আগ্রহী। নিচের ছবিটাতে লেড আয়নের জন্য আমরা সেটা করে ফেলি। আয়তন পরিবর্তনের সাপেক্ষে ঘনমাত্রা বা মোলারিটির পরিবর্তনসংক্রান্ত এই সূত্র তো তোমরা জানই।
অনুরূপভাবে ক্লোরাইড আয়নের জন্য,
এবার? এবার এই দুই আয়ন একত্রে অবস্থান করছে একই পাত্রে। এদের জন্য আয়নিক গুণফল বের করে দ্রাব্যতা গুণফলের সাথে মেলান যাক।
Ksp এর মান ছিল 1.7 x 10-5 যা অপেক্ষা এই মান কম। তাই অধঃক্ষেপ পড়বে না ?
এসে গেছি শেষ পর্যায়ে। তার আগে আরও একটা সমস্যা। আমরা কমন আয়ন ইফেক্ট নিয়ে অনেক কথা শুনেছি না? শুনেছি না একই দ্রবণে আগে থেকে কোনো নির্দিষ্ট আয়ন উপস্থিত থাকলে পরে ঐ আয়নধারী কেউ আর বিয়োজিত হতে চায় না? দেখে নাও দ্রাব্যতা দিয়েই এর চাক্ষুষ উদাহরণ।
হেহে! পানিতে দ্রাব্যতা নির্ণয় করতে দিয়েছে। Ksp দেওয়া থাকলে এটা কোনো ব্যাপার?
কিন্তু কিন্তু!! ঐ সোডিয়াম সালফেট দ্রবণে? তাতে তো আগে থেকেই সালফেট আয়ন আছে। তুমি একটা লবণ যেখানেই নাও না কেন, তার তাপমাত্রা ঠিক থাকলে Ksp কখনই চেঞ্জ হয় না। তবে কি বেরিয়াম সালফেটেরে দ্রাব্যতা কি আগের মতই হবে? আচ্ছা, ধরে নাও এর দ্রাব্যতা ঐ দ্রবণে S। তাহলে দ্রাব্যতা গুণফল নির্ণয় করার জন্য আমরা আবার সমীকরণ লিখি। এই সমীকরণে সালফেটের ঘনমাত্রা বসানোর সময় আমাদের একটু যত্নশীল হতে হবে কেননা কিছু সালফেট (0.1 M ঘনমাত্রার) আগেই থাকায় মিশ্রনে সালফেটের ঘনমাত্রা হয়ে যাবে (S+0.1)।
S এর মান অতি ক্ষুদ্র বলে আমরা (0.1+S) কে কেবল 0.1 ধরতে পারি আর তারপর এভাবে বের করতে পারি S এর মান –
পানিতে দ্রাব্যতার সাথে এই দ্রাব্যতা মিলিয়ে দেখ, এই দ্রাব্যতা প্রায় দশ হাজার গুণ কম!!! এভাবেই সমআয়ন বা কমন আয়ন প্রভাব সত্যিই প্রভাব ফেলে কোনো কিছুর দ্রাব্যতায়
[১২শ সপ্তাহ] HSC-2022 রসায়ন ১ম পত্র এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও উত্তর | Chemistry-1 Assignment Ans
দ্রাব্যতা গুণফল এর যে সংজ্ঞা উচ্চ মাধ্যমিক বইসমূহে আছে তা একটু ভেঙ্গে বুঝানো যাক। বই বলছে, “নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো আয়নিক যৌগের সম্পৃক্ত দ্রবণে ঐ যৌগের সংগঠক আয়নসমূহের যথোপযুক্ত ঘাতসহ মোলার ঘনমাত্রার গুণফলকে ঐ তাপমাত্রায় যৌগটির দ্রাব্যতা গুণফল বলে”।
এই সংজ্ঞা দেখে যারা ট্যাবটা কেটে দিতে চাচ্ছ তাদের বলছি একটু থামো
ধরে নাও, MmAa একটা আয়নিক লবণ (M হল ক্যাটায়নের প্রতীক, A অ্যানায়নের) যার পানিতে দ্রাব্যতা S mol/L. 1 litre পানিতে এটার যেকোনো পরিমাণকে (S mol এর চেয়ে বেশি) দ্রবীভূত হতে দিলে দেখ তো এমন ঘটনা ঘটবে না?
1 litre পানিতে লবণটির কেবল S mol দ্রবীভূত হওয়াই সম্ভব। যেহেতু প্রতি অণু থেকে m mol ক্যাটায়ন উৎপন্ন হয় তাই ঐ দ্রবণে ক্যাটায়নের মোলসংখ্যা হবে mS, একইভাবে অ্যানায়নের মোলসংখ্যাও হবে aS. ক্যাট্যায়ন ও অ্যানায়নের চার্জ এরকম হল কেন তা বুঝতে হলে ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড বা ক্যালসিয়াম ফসফেটের পানিতে বিয়োজনের সাথে এটার তুলনা কর, আশা করি উত্তর পেয়ে যাবে
দ্রাব্যতার কাহিনী এখানে শেষ হলে মন্দ হত না। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, লবণটি পানিতে সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করার পর কিছু অতিরিক্ত লবণ (আমরা ইচ্ছা করেই বেশি বেশি নিয়েছিলাম না?) পাত্রের তলায় পড়ে আছে এবং এটার সাথে দ্রবণের কিছু একটা যেন ঘটছে!! এই কিছু একটা কী? আমরা আবিষ্কার করলাম, এমতাবস্থায় দ্রবণ থেকে কিছু পরিমাণ আয়ন আবার সলিড অবস্থায় ব্যাক করে নিচে জমছে আর একইসময়ে কিছু কঠিন লবণ বিয়োজিত হয়ে দ্রবণে ক্যাটায়ন অ্যানায়ন দান করছে! এ যেন ঠিক উভমুখী বিক্রিয়ার মত। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা। এই দুই বিপরীত ক্রিয়ার সংঘটনের গতিবেগও এক! তারমানে আমরা উভমুখী বিক্রিয়াটাকে সাম্যাবস্থায় উপনীত হয়েছে বলে দেখতে পাচ্ছি!! এ তো অসম্ভব!!
না, এটা অসম্ভব না। এটাই স্বাভাবিকভাবে ঘটে এবং এটা ঘটানোর জন্য অন্য কোনো লোকেরও প্রয়োজন পড়ে না
সদ্য জন্ম নেওয়া এই সাম্যাবস্থার জন্য কি তাহলে একটা সাম্যধ্রুবক আনা যায়? জ্বী অবশ্যই! তাহলে সেই সাম্যাংকের চেহারা নিশ্চয়ই এমন হওয়া উচিত –
শেষ করছি এখানেই। আরো কিছু জানার কিংবা বলার থাকলে কমেন্ট করবে। সবাই পড়াশোনায় আরো দ্রবণীয় হবে এই কামনা করছি