“হিসাববিজ্ঞান মানুষের মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃস্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে” এই সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লেখ (অনুদ্ধ -২৫০ শব্দ)

কোন ব্যক্তির উপর অর্পিত দায়িত্ব ও বন্টিত কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করে তার ফলাফল আদেষ্টাকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে জবাবদিহিতা বলে। সমাজে বসবাসকারী সকল মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে কারাে কাছে জবাবদিহি করে থাকে।

১। প্রতিটি দায়িত্বের কেন্দ্রে নিয়ােজিত ব্যক্তিদের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বন্টন করে দেওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানে অপচয়, অপব্যয়, তহবিল চুরি ও জালিয়াতি কমে যায়।

২। প্রতিটি আর্থিক কর্মকান্ডে হিসাব ব্যবস্থার প্রতিফলিত হয়। এ জন্য প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়।

৩। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন ও উক্ত দায়িত্ব পালনের জন্যে প্রয়ােজনীয় ক্ষমতা প্রদান করা হলে, তারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে নিজের লক্ষ হিসাবে গণ্য করে। ফলে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়।

৪। অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে।

মানুষের জীবনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ায় হিসাববিজ্ঞান অনেক অবদান রাখে। হিসাববিজ্ঞানে জবাবদিহিতা না থাকলে প্রতিষ্ঠানে আর্থিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

৯ম (নবম) শ্রেণীর ৬ষ্ঠ সপ্তাহের হিসাববিজ্ঞান এসাইনমেন্ট সমাধান ২০২১

“হিসাববিজ্ঞানের ধারণা:

হিসাববিজ্ঞানের ধারণাসমূহ লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের ভিত্তি হতে শুরু করে তা হিসাববিজ্ঞানের বিবরণীসমূহে প্রদর্শনের পদ্ধতির সম্পর্কে ধারণা দেয়।

আমার এই আলোচনাটা একাদশ শ্রেণীর নবীন ছাত্রছাত্রীদের হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কে মৌলিক ধারনা দেওয়ার উদ্দেশ্য। আগামী ১লা জুলাই থেকে আপনাদের কলেজ জীবন শুরু হবে। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য অগ্রিম অভিনন্দন রইল।

আশা করি নবম-দশম কিংবা হিসাববিজ্ঞানের যেকোন শিক্ষার্থীদের জন্যও এই আলোচনাটা অনেক কার্যকরী হবে।

এটি হচ্ছে একটি তথ্য ব্যবস্থা যা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনগুলো চিহ্নিত করে লিপিবদ্ধকরণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে।

হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য:

হিসাববিজ্ঞানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে লেনদেন চিহ্নিতকরণ ও লিপিবদ্ধকরণ।
> হিসাববিজ্ঞানের মূখ্য/প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা।

হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি:

অতি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ লেনদেনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ও বিভিন্ন প্রকারে তা সংরক্ষণের পদ্ধতি বের করে । দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রাচীন গুহা থেকে উদ্ধারকৃত কিছু লিপি থেকে বোঝা যায় যে প্রায় ৭৬,০০০ বছর আগেও মানুষ হিসাব সংরক্ষণের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল। এটি ছিল হিসাববিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন।

হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলি পাওয়া যায় ব্যাবিলনিয়, এশিরীয় ও সুমেরীয় সভ্যতায়। এই সভ্যতাগুলো প্রায় ৭,০০০ বছর পূর্বে মেসোপটেমিয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠে এবং বিকাশ লাভ করে। উক্ত সভ্যতার লোকেরা শুধুমাত্র কৃষি উৎপাদন পরিমাপ করতেই হিসাবের আদিম পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করত। সেই আদিম পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ফসল গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে না বেশি হয়েছে তা নির্ণয় করা যেতো। উৎপাদিত ফসলের একটি অংশ মন্দিরে দান করতে হতো। আর কে কতোটুকু দান করল মন্দির কর্তৃপক্ষ তা দেওয়ালে চিহ্নের মাধ্যমে লিখে রাখতো। এই প্রাচীন দেওয়াল খোদাইগুলোকেও হিসাব বিজ্ঞানের প্রাচীন প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে।

প্রস্তর যুগে মানুষ যখন গুহায় বাস করত এবং ফলমূল ও পশু শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত তখনই তারা এগুলো গুহার অভ্যন্তরে পাথরের গায়ে দাগ কেটে হিসাব রাখত।

প্রাচীনযুগে মানুষ গুহা ছেড়ে সমভূমিতে বসবাস শুরু করে। এ যুগে মানুষ গুহায় পাথরের গায়ে দাগ কাটার পরিবর্তে ঘরের দেয়ালের গায়ে দাগ কেটে, রশিতে গিট বেধে, বাঁশে দাগ কেটে, মাটির টিলা গননা করে হিসব রাখত।

মূল্যবােধ সৃষ্টিতে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা:

সমাজ ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য উপাদান হচ্ছে মূল্যবােধ। যে সকল ধারণা, বিশ্বাস, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, মানুষের আচার-আচরণকে এবং কার্যাবলীকে পরােক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সে গুলােকে একত্রে মূল্যবােধ বলে।

১। ধর্মীয় অনুশাসন:

সম্পদের সৃষ্ট ব্যবহার এবং আর্থিক কর্মকান্ডের হিসাব-নিকাশ প্রদানের দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের ধর্মীয় কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত।

২। নৈতিক চরিত্র গঠন:

হিসাবের খাতায় প্রতিটি লেনদেন সময় মত লিপিবদ্ধ করা। সঠিক ভাবে আর্থিক ফলাফল তৈরি করার মাধ্যমে মানুষকে ন্যায় ও অমূল্য চারিত্রিক গঠনে ভূমিকা রাখে।

৩। সঞ্চয় ও মিতব্যয়িতা:

হিসাববিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে হিসাব সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, যা একজন মানুষকে তার অর্জিত আয় হতে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে শেখায়।

৪। আত্মবিশ্বাস ও স্ব-নির্ভর:

হিসাববিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন, জমা খরচ, আয়-ব্যায় ও লাভ-লােকসান ইত্যাদি হিসাব সম্পর্কে জানতে পারা যায়। ফলে একজন মানুষ যখন আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশা গ্রহন করে, তখন সে সহজে তার কর্মকান্ডকে পরিচালনা করতে পারে।

৫। দূর্ণীতি ও জালিয়াতি হ্রাস ও নিরীক্ষা:

হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে দূর্ণীতি পরায়ন ব্যক্তিদের সহজে চিনতে পারা যায়। শাস্তি ও দুর্নাম ভয়ে ঐ ব্যক্তি তহবিল তছরুপ বা অপব্যয় ইত্যাদি কার্যক্রম হতে বিরত থাকে। ফলে উক্ত মানুষের মধ্যে
মূল্যবােধ সৃষ্টি হয়।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের জীবনে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরিতে হিসাববিজ্ঞান অনেক অবদান রাখে। হিসাববিজ্ঞানে জবাবদিহিতা না থাকলে প্রতিষ্ঠানে আর্থিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।