উদ্যোক্তার উদ্ভাবনী কর্মকান্ডকে অনুপ্রাণিত করতে মেধাসম্পদের ভূমিকা – মেধা সম্পদ, মেধা সম্পত্তি বা বৌদ্ধিক সম্পত্তি (ইংরেজি: Intellectual property সংক্ষেপে IP) বলতে এক বিশেষ শ্রেণীর সম্পত্তিকে বোঝায় যা মূলত মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টি। এগুলি মূলত অদৃশ্য ও ধরা-ছোয়াঁ যায় না। এগুলিকে সুরক্ষার জন্য মেধাস্বত্ব (গ্রন্থস্বত্ব), কৃতিস্বত্ব এবং ট্রেডমার্ক আইন প্রয়োগ করা হতে পারে।
[adToAppearHere]
এছাড়া ব্যবসায়িক গোপনীয় বিষয়, বিজ্ঞাপনের অধিকার, নৈতিক অধিকার, অন্যায্য প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে অধিকার, ইত্যাদিও মেধা সম্পদের আলোচনায় পড়ে। শৈল্পিক সৃষ্টিকর্ম যেমন সঙ্গীত, সাহিত্য, আবিষ্কার, উদ্ভাবন, শব্দ, শব্দগুচ্ছ, প্রতীক, নকশা — এ সবই মেধা সম্পদ হিসেবে সুরক্ষিত হতে পারে।
কেবল ১৯শ শতকে এসেই “মেধা সম্পদ” ধারণাটি প্রচলিত হওয়া শুরু করে। ২০শ শতকের শেষে এসে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে এটি আইনগতভাবে স্বীকৃত হয়।
মেধাসম্পদ হিসাবে পেটেন্টের ধারণা ব্যাখ্যা:
[adToAppearHere]
পেটেন্ট হলো এক ধরনের মেধাসম্পদ। কোন দেশে বা বিদেশে কোন আবিষ্কার যেমন জনগনের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে, তেমনি পেটেন্টও উদ্ভাবকসহ অন্যান্য সৃষ্টিশীল ব্যক্তিদের নতুন কোন আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করতে উৎসাহিত করে থাকে। পেটেন্টের মাধ্যমে এরূপ আবিষ্কারের জন্য আবিষ্কারককে তার স্বীকৃতিস্বরূপ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একচেটিয়া মালিকানা প্রদান করা হয়।
এক্ষেত্রে পণ্য বা বস্তুর উদ্ভাবক বা আবিষ্কারক ও সরকারের মধ্যে চুক্তি হয়। আবিষ্কারককে পেটেন্টটি প্রদানের অর্থ হলো এই নির্দিষ্ট সময়ে অন্য কেউ এটি তৈরি, ব্যবহার এবং বিক্রয় করতে পারবে না । অনেক সময় কোন অসাধু ব্যবসায়ী বা প্রতিযোগী বিধি লঙ্ঘন করে নকল পণ্য বাজারে বিক্রয় করে উদ্ভাবনকারীকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
[adToAppearHere]
পেটেন্ট করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিল্পোদ্যোক্তার পরিশ্রমলব্ধ উদ্ভাবন নকল বা অন্য কোনো উপায়ে তৈরি বা বিক্রি করে যাতে অন্যরা আর্থিক সুবিধা অর্জন না করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। ব্যবসায় জগতে প্রকৃত উদ্ভাবক এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে পেটেন্ট ধারণার উৎপত্তি হয়েছে। বস্তুত এ বিষয়ে শিল্পোদ্যোক্তা সচেতনতার অভাব বা অবহেলার কারণে অনেক সময় প্রতারিত হয়েছে।
বাংলাদেশে ১৯১১ সালের পেটেন্ট ও ডিজাইন আইন চালু আছে। কোন পণ্য বা বস্তুর আবিষ্কারক তার পণ্য বা বস্তুটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে নিবন্ধন করে রাখেন। এভাবে নিবন্ধিত থাকলে পণ্যের কোন নকল বাজারে কেউ ছাড়লে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। এতে আবিষ্কারকের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না।
মেধাসম্পদ হিসাবে ট্রেডমার্কের ধারণা ব্যাখ্যা:
[adToAppearHere]
ধরুন, আপনি নিজের একটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান শুরু করতে যাচ্ছেন। আপনি অবশ্যই চাইবেন আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে যেন কিছুটা অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্বলিত হয়। এ কারণে আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য একেবারে স্বতন্ত্র একটি নাম পছন্দ করলেন।
ব্যবসায়িক নীতিমালায় পরিবর্তন এর পাশাপাশি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং এর জন্য প্রয়োজন একদমই অনন্য একটি লোগো বা চিহ্ন যেটি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সব স্থানে উপস্থাপন করবে। এই লোগো কিংবা চিহ্নটি ব্যবসায়িক পরিচিতিকে বাড়িয়ে তুলবে।
[adToAppearHere]
বলা যায়, ট্রেডমার্ক বা ব্যবসা স্বত্ত্ব হলো এমন একটি চিহ্ন যার মাধ্যমে এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের থেকে আগত সেবা বা পণ্যকে অন্য প্রতিষ্ঠান হতে আগত সেবা বা পণ্যকে আলাদা করা যায়। সর্বপ্রথম ইতালিতে ট্রেডমার্কের ব্যবহার শুরু হয়।
সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র চিহ্নটি সেই প্রতিষ্ঠানের কাগজ-পত্র,কার্ড,ক্যাশ মেমো,অন্যান্য সেবা এবং পণ্যের মোড়কে দেখা যায়। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানের ট্রেডমার্ক নির্দিষ্ট সময় পর নবায়ন করা যায়।
কেন ট্রেডমার্ক করা প্রয়োজন?
[adToAppearHere]
ট্রেডমার্ক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কিংবা ঐ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে একমাত্র ঐ ট্রেডমার্ক ব্যবহার করতে পারেন।
ধরুন, আপনি যেকোনো ইউনিক নামে একটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালু করলেন এবং ওই নামের একটা ব্র্যান্ড তৈরী হলো। সেসময় ওই নামেই অন্য একজন আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে আপনার ব্র্যান্ডের বারোটা বাজিয়ে দিলো কিংবা আপনার পরিশ্রমের ফল উক্ত ব্যক্তি ভোগ করতে শুরু করলো।
এসব সমস্যা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো ট্রেডমার্ক। এই ট্রেডমার্ক কেবল স্বত্ত্বাধিকারীর ব্যবসায়িক স্থাপনা ও পণ্যে প্রদর্শিত হতে দেখা যায়। স্বত্ত্বাধিকারী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি যেকোন পণ্যের ট্রেডমার্ক নিয়ে ব্যবহার করলে বা বিজ্ঞাপন দিলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং পরবর্তীতে স্বত্বাধিকারী চাইলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
[adToAppearHere]
ট্রেডমার্কের লাইসেন্স ও করা যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহ ট্রেডমার্কের লাইসেন্স করেন এবং এর মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা ও পণ্য বিপণন করে থাকেন। লাইসেন্সকৃত ট্রেডমার্কের অবৈধ ব্যবহার, নকল পণ্য বা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ব্রান্ড পাইরেসি বলা হয়।
মেধাসম্পদ হিসাবে কপিরাইটের ভূমিকা ব্যাখ্যা:
[adToAppearHere]
প্রকৃত পক্ষে কপিরাইট চুক্তি পণ্য বাজারজাতকরণের একটি জনপ্রিয় উপায়। উপমহাদেশে ১৯১২ সালে প্রথম কপিরাইট আইন প্রণীত হয়। বাংলাদেশে কপিরাইট আইন ২০০০ প্রচলিত আছে যা সর্বশেষ ২০০৫ সালে সংশোধন করা হয়। মোট কথা মেধাসম্পদ সংরক্ষণের উপায়গুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করলে ব্যবসায় উদ্যোক্তা অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। কপিরাইট আইন ২০০৫ অনুযায়ী লেখক বা শিল্পীর জীবনদ্দশায় ও মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট সংরক্ষিত থাকে।
[adToAppearHere]
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বা বিএসটিআই কোনো বিশেষ পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করতে চাইলে বা সেই বিশেষ পণ্যটিকে বাজারে প্রচলিত অনুরূপ অন্যান্য পণ্য থেকে আলাদা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে সেই পণ্যের প্রতীক রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধিকরণ করতে হয়। এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বা বিএসটিআই।
এটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে পণ্য প্রতীক বা ট্রেড মার্ক নিবন্ধিকরণ করা যেতে পারে। তদুপরি কতিপয় নির্ধারিত পণ্যের মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্ধারিত মান অনুযায়ী সেই সকল পণ্য উৎপাদন করে বিএসটিআই থেকে বাধ্যতামূলকভাবে সনদপত্র বা সার্টিফিকেট নিতে হয়।
বিএসটিআই বাধ্যতামূলকভাবে সার্টিফিকেটের আওতাধীন পণ্যের তালিকা সংরক্ষণ করে। প্রত্যেকটি পণ্যের জন্য বিএসটিআই তাদের নামসহ একটি স্ট্যার্ন্ডাড নম্বর প্রদান করে থাকে। নির্ধারিত মান অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন না করলে সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিএসটিআই কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেশন বা লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে । কোন কোন পণ্য বিএসটিআই এর বাধ্যতামুলক সার্টিফিকেশন মার্ক এর আওতাধীন এবং সেই সকল পণ্যের নির্ধারিত মান কেমন তা বিএসটিআই থেকে জানা যায়।
[adToAppearHere]
উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিএসটিআই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। বিএসটিআই এর কল্যাণে উৎপাদনকারীরা মানসম্মত পণ্য বাজারজাতকরন করে থাকে। অনেকসময় বিএসটিআই এর সনদ ও নম্বরবিহীন নিম্নমানের পণ্য কোন কোন উৎপাদনকারী বাজারে ছেড়ে থাকে। আইনের যথাযথ
প্রয়োগ এবং ক্রেতা সাধারণ সচেতন হয়ে সেসব পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকলে বিএসটিআইএর সনদবিহীন নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে উঠে যাবে। তখন বাজারে মানসম্মত পণ্যের একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা গড়ে উঠবে।
বিএসটিআই এর মৌলিক উদ্দেশ্য ৪টি যা নিম্নরূপ
১. জাতীয় মান প্রণয়ন করা
২. গুণগত মানের নিশ্চয়তার জন্য মানের সহায়তা চাওয়া
৩. ওজন ও পরিমাপের জন্য মেট্রিক পদ্ধতির বাস্তবায়ন
৪. পরীক্ষাগারে হাতে কলমে পরীক্ষা করে পরীক্ষণ প্রতিবেদন প্রমান।
ব্যবসায় উদ্যোগ ৩য় সপ্তাহের এসাইনমেন্ট
[adToAppearHere]