মি. রবিন যে ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যবসায় পরিচালনা করছেন তার সাথে তোমার পাঠ্য বইয়ের পঠিত অন্যান্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর

মি. রবিনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যবসায় পরিচালনার সাথে পাঠ্যবইয়ের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা (Capitalistic Economy)

এই ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানগুলাে ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং প্রধানত বেসরকারি উদ্যোগে, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ ধরনের অর্থব্যবস্থাকে ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বলে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ফরাসি বিপ্লবের | মধ্য দিয়ে সমগ্র ইউরােপে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির সূত্রপাত ঘটে। ক্ল্যাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ | ও তাঁর অনুসারীগণ এ ব্যবস্থা সমর্থন করেন।

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বা নির্দেশমূলক অর্থনীতি (Socialistic or Command Economy) 

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সমাজের অধিকাংশ সম্পদ ও উৎপাদনের উপাদানের উপর রাষ্ট্রের বা সমাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত থাকে। অধিকাংশ শিল্প-কারখানা ও উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকার বা সমাজ এবং সেগুলাে সরকারি বা সামাজিক নির্দেশে পরিচালিত হয়ে থাকে। কোন কোন দ্রব্য, কী পরিমাণে, কীভাবে এবং কার জন্য উৎপাদিত হবে তা সরকার বা রাষ্ট্র নির্ধারণ করে।

মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (Mixed Economic system) 

যে অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানা ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বিরাজ করে তাকে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বলে। অর্থাৎ এ অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত ও সরকারি উদ্যোগ সম্মিলিত ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান। যথা- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, বাংলাদেশ, ভারত ইত্যাদি।

ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (Islamic economic system)

ইসলামি অর্থনীতি হলো কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক অর্থনৈতিক লেনদেন ব্যবস্থা। ইসলামি কৃষ্টি ও তামাদ্দুন সমৃদ্ধ যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাই ইসলামি অর্থনীতি। প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী ইবনে খালদুন বলেন- ইসলামি অর্থনীতি হলো জনসাধারণের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নীতি-পদ্ধতি অনুসরণে সৃষ্টির লালন-পালনের যাবতীয় জাগতিক সম্পদের সামগ্রিক কল্যাণধর্মী ব্যবস্থাপনাই ইসলামি অর্থনীতি। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ডঃ এম নেজাতুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন- “ইসলামি অর্থনীতি সমকালীন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মুসলিম চিন্তাবিদদের জবাব”। ডঃ এম এ মান্নান বলেন- “ইসলামি অর্থনীতি হলো একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে”।

মিস্টার রবিনের ব্যবসাটির অর্থব্যবস্থা চিহ্নিতকরণ

প্রদত্ত প্রশ্নে মি. রবিন একটি পরিবহণ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। সরকারি পরিবহণ সংস্থা পরিচালিত বাসের টিকিটের মূল্যের তুলনায় তার বাসের। টিকিটের মূল্য কিছুটা বেশি। তা সত্ত্বেও তার কোম্পানির ব্যবসা বেশ সফল। মি. রবিন যে ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যবসায় পরিচালনা করছেন তা মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

মিশ্র অর্থনীতি ব্যবস্থায় উৎপাদন, ব্যবসা বাণিজ্য, বন্টন ও ভোগ সহ অধিকাংশ অর্থনৈতিক কার্যাবলি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগঠিত ও পরিচালিত হয়। অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়। তবে তা একচেটিয়া মুনাফা নয়। এ ব্যবস্থায় ভোক্তা সাধারণ দ্রব্য ক্রয় বিক্রয় ও ভোগ এর ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে দ্রব্যের দামের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুসারে কোন দ্রব্যের উৎপাদন কিংবা ভোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

প্রদত্ত প্রশ্নে মিস্টার রবিন টিকিটের মূল্য কিছুটা বেশি নিলেও সেখানে সরকারি বাসের অবস্থান ছিল। সরকার চাইলে তার টিকিটের দামের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই বলা যায় তার ব্যবসাটি মিশ্র অর্থব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত।

চিহ্নিত অর্থব্যবস্থার সাথে অন্য অর্থ ব্যবস্থার তুলনা 

মিশ্র অর্থনীতি ব্যবস্থা

অন্যান্য অর্থনীতি ব্যবস্থা 

মিশ্র অর্থনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এখানে সরকারি ও বেসরকারি খাত পাশাপাশি অবস্থান করে।অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সরকারি ও বেসরকারি ভূমিকা নিরূপণ করা হয়। 

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা সাধারণত সকল সম্পদ ব্যক্তি মালিকানায় থাকে। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা অধিকাংশ সম্পদের মালিক থাকে সরকার। 

মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধর্মীয় অনুশাসন তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

ইসলামী অর্থনীতি ব্যবস্থা ধর্মীয় অনুশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

মিশ্র অর্থনীতি ব্যবস্থায় ভোক্তার স্বাধীনতা বজায় থাকে। এবং অর্থব্যবস্থায় ভোক্তা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ ভোক্তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রভাব বিস্তার করে।

অন্যদিকে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি এবং অর্থনীতিতে ভোক্তার পরিপূর্ণ স্বাধীনতা বজায় থাকে না।ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক বাজারকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক বাজারকে ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে ভোক্তা তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। 

মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে মুনাফা অর্জন করা যায়। এ ব্যবস্থায় একচেটিয়া মুনাফা অর্জন করা সম্ভব নয়।

কিন্তু ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে মুনাফা অর্জন করার সুযোগ সীমিত। এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি অপরিসীম।এ ব্যবস্থায় একচেটিয়া মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের মতো সরকারি খাত বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। তবে তারা মুনাফার দিকে লক্ষ্য নির্ধারণ না করে জনকল্যাণের দিকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের ব্যবস্থা অপরিসীম থাকলেও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা এর ব্যবস্থা সীমিত। তবে ইসলামী অর্থনীতি ব্যবস্থা ধর্মীয় অনুশাসনের পরিসীমার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। 

বাংলাদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য অর্থ ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি 

বাংলাদেশের পেক্ষাপটে মিশ্র অর্থনীতি ব্যবস্থা প্রয়োজন নেতার পক্ষে যুক্তি দেওয়া হল:-

এই অর্থনীতি ব্যবস্থায় অন্য সকল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মিশ্রণ রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও সরকারি উভয় মালিকানা থাকবে। তবে ব্যক্তিগত মালিকানা থাকলেও সেক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকবে এবং কোন পণ্য কী পরিমাণ উৎপাদন করতে হবে ও দাম কেমন হবে এসবকিছুর ক্ষেত্রে সরকারি কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।

এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলাে ভােক্তার চাহিদা বা ইচ্ছানুযায়ী পণ্য উৎপাদন করা। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলাের মধ্যে পারস্পরিক সহযােগীতা থাকা এই অর্থনীতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। সকল উন্নয়নশীল দেশে এরকম অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশেও এরকম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে।একটি মিশ্র অর্থনীতি, অবস্থায়, উত্পাদক ও ক্রেতার অর্থনীতির প্রধান সমস্যা সমাধানে একটা মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে: “।

কি, কিভাবে, যাদের উত্পাদন করতে কত এবং জন্য” এই এটা সম্ভব একত্রিত করে তোলে অর্থনৈতিক দক্ষতা জনসংখ্যার চাহিদার সঙ্গে, দেশের মধ্যে সামাজিক উত্তেজনা কমে যায়। যেমন একটি ব্যবস্থায় বেশী বা কম সুষম, (কৌশলগত ও সামাজিক সামগ্রী ছাড়া) একাধিপত্যমূলক উন্নয়নে ক্ষতিকারক নয় এবং ঘাটতি যে ভিতর থেকে রাষ্ট্র চলছে অনুমতি দেওয়া হয় না হয়।