১৯৪৭ সালের ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পেক্ষাপট পর্যালােচনা

এইচএসসি ২০২১ সালের পরীক্ষার্থীদের জন্য তৃতীয় সপ্তাহের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন ও সমাধান ইতিমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। প্রিয় শিক্ষার্থীরা এখন আমরা এইচএসসি ৩য় সপ্তাহের এসাইনমেন্ট কাজ ১৯৪৭ সালের ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করব। যারা এখনো এই প্রশ্নের সমাধান নিতেপারোনি তারা এই পোস্টটি ভালোভাবে পড়বে।

প্রথম অধ্যায়ঃ ব্রিটিশ ভারতের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের বিকাশ।

অ্যাসাইনমেন্ট কাজ: ১৯৪৭ সালের ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা

শিখনফল:

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে পারবে।

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের রাজনৈতিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা যাবে।

দ্বিজাতিতত্ত্বের তাৎপর্য মূল্যায়ন করতে পারবে।

লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা যাবে।

লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা যাবে। এবং

১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা যাবে।

নির্দেশনা:

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন।

দ্বিজাতিতত্ত্ব

লাহোর প্রস্তাব

১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন

১৯৪৭ সালের ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি প্রেক্ষাপট পর্যালোচনাঃ

ভূমিকা:

এই ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশরা প্রায় 200 বছর তাদের শাসন চালায় আর শাসন শেষে সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র কিন্তু এ দেশ দুটি সৃষ্টির পেছনে রয়েছে নানাবিধ ঘটনা যা ব্রিটিশদের বাধ্য করেছিল ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টিতে। ভারত শাসন আইন ১৯৩৫:১৯১৯ সালের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন প্রণয়নের পর তার ত্রুটি-বিচ্যুতির বিরুদ্ধে গান্ধীজীর নেতৃত্বে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে ওঠে এই পর্বে আইন অমান্য আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারকে আতঙ্কিত করে তোলে। আর এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্রিটিশ সরকার যে নতুন আইন পাশ করেন তাই ভারত শাসন আইন – ১৯৩৫ নামে পরিচিত।

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট: ১৯৩৫ সালের নতুন ভারত শাসন আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো:

গণআন্দোলন:

১৯১৯ সালের মন্টফর্ট সংস্কার আইনি ভারতীয়দের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হলে গান্ধীজীর নেতৃত্বে ব্যাপক গণ আন্দোলন শুরু হয়।

বিপ্লবী কার্যকলাপ:

এই সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লবী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় ফলে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

জাতীয়তাবাদের প্রভাব:

ভারতে প্রথম জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার ব্রিটিশ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে।

সাইমন কমিশনের রিপোর্ট:

১৯৩০ সালে সাইমন কমিশন ভারতীয় সাহিত্য শাসন বিষয়ে যে রিপোর্ট দেয় তা ভারত শাসন আইন প্রণয়নের পথ খুলে দেয়।

গোলটেবিল বৈঠক:

সাইমন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে এই আলোচনা গোলটেবিল বৈঠক নামে পরিচিত এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সাংবিধানিক সংস্কার করতে বাধ্য হয়।

শ্বেতপত্র প্রকাশ:

এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার এত সালের একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে বাধ্য হয় যার ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত শাসন আইন পাস করে।

ভারত শাসন আইনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য:

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনে আইনে ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্য গুলোকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয় দেশীয় রাজ্যগুলির যুক্তরাষ্ট্রের যোগ দেয়ার ঐচ্ছিক হিসেবে গণ্য হয়।

কেন্দ্রে 5 বছর মেয়াদী দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং নিম্নকক্ষ ফেডারেল অ্যাসেম্বলি 375 জন এবং উচ্চকক্ষ কাউন্সিল অফ স্টেট 260 জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে বলে ঘোষিত হয়।

সাম্প্রদায়িক নির্বাচনে মুসলিম ও তফসিল সদস্যের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় মন্ত্রী পরিষদের দায়িত্ব গভর্নর জেনারেলের অধীনে একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ভার দেওয়া হয় মন্ত্রীরা কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন বলে জানানো হয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন ক্ষমতা কি সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এই দুই ভাগে ভাগ করা হয় প্রতিরক্ষা বৈদেশিক ব্যাংক ইত্যাদি সংরক্ষিত বিষয়ে গভর্নর জেনারেলের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়।

কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের উদ্দেশ্য তিনটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয় কেন্দ্রীয় তালিকা, প্রাদেশিক তালিকা, যুগ্ম তালিকা।

গভর্নর জেনারেলদের কাজের জন্য সরাসরি ভারত সচিব ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ ছিল।

প্রাদেশিক সরকারের ক্ষেত্রে:

প্রদেশগুলোতে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বায়ত্ত শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বাংলাদেশের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট এবং অবশিষ্ট পাঁচটিতে এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রাখা হয়।

প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা তাদের কাজের জন্য প্রাদেশিক আইন সবার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।

কেন্দ্রের অনুকরণে প্রদেশের আইন-শৃঙ্খলা ইত্যাদি দায়িত্ব গভর্নরের হাতে দেওয়া হয়।

প্রদেশের গভর্নর আইন প্রণয়ন ও নাকচ করার অধিকারী হন।

দ্বিজাতি তত্ত্ব:

দ্বিজাতি তত্ত্ব বলতে দুটি চারদিকে পূজায় তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মুসলিম লীগের প্রতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য মূলক আচরন করা হয়। কংগ্রেসের এই বৈষম্যমূলক আচরণের প্রেক্ষিতে মুসলিম লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যে তত্ত্ব প্রদান করেন তাকে দ্বিজাতিতত্ত্ব বলা হয় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের জনক বলা হয়।

দ্বিজাতি তত্ত্বের তাৎপর্য:

পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক ঘোষিত দ্বিজাতি তত্ত্বের মূল কথা ছিল ভারতের হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান দুটি সম্প্রদায় নয় তারা দুটি পৃথক জাতি অতএব তাদের জন্য দু’টি পৃথক রাষ্ট্রের প্রয়োজন।

জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব ছিল পাকিস্তান প্রস্তাব বা ভারত বিভক্তির মূলভিত্তি আর এর ফলেই সাতচল্লিশ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় তাই বলা যায় পাকিস্তান সৃষ্টি এবং ভারত বিভক্তির দ্বিজাতি তত্ত্বের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লাহোর প্রস্তাব:

১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের জয় এবং মুসলিম লীগের পরাজয় পরবর্তীতে মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দকে শঙ্কিত করে তোলে কংগ্রেস আইনসভার নেতৃত্বে গ্রহণ করে এবং মুসলিম লীগের সাথে আলোচনা ছাড়াই মন্ত্রিসভা গঠন করে ফলে কংগ্রেস শাসিত এলাকায় মুসলমান জনসাধারণের মনে ভীতির সঞ্চার হয়।

এ অবস্থায় মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সুযোগমতো মুসলমানদের স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আলাদা রাষ্ট্রের জন্য দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রচারে উৎসাহী হন আরে চিন্তাধারার আলোকেই পাঞ্জাবের লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একেএম ফজলুল হক উপমহাদেশের মুসলমানদের সম্বলিত একটি প্রস্তাব পেশ করেন এই প্রস্তাবে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব পাকিস্তান প্রস্তাব নামে অভিহিত হয়।

লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য:

ভৌগলিক দিক থেকে সংলগ্ন এলাকা গুলোতে পৃথক অঞ্চল বলে গণ্য করতে হবে।

এসকল অঞ্চলের ভৌগোলিক সীমানা প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করে ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের যে সকল স্থানে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এসমস্ত স্বাধীন রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হবে সার্বভৌম ও সায়ত্ব শাসিত।

ভারতের নবগঠিত মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক শাসনতান্ত্রিক অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা করা হবে।

দেশের যে কোনো ভবিষ্যত শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনায় উক্ত বিষয়গুলোকে মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

আমার প্রস্তাবের তাৎপর্য: ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব অপরিসীম এ প্রস্তাবের মাধ্যমে জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব সুস্পষ্ট রূপ লাভ করে মুসলমানরা মুসলিম লীগের নেতৃত্ব তাদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি গঠনের সংগ্রামে লিপ্ত হয়।

শাসনতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার ও মুসলমানদের দাবি মেনে নেয়ার ফলে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়।

এ আইন অনুযায়ী ভারতকে বিভক্ত করে ভারতীয় ইউনিয়ন ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হয় এ আইনের ফলে ভারতবর্ষের উপর থেকে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত সম্রাট উপাধি লোপ পায়। ভারত ও পাকিস্তানের গণপরিষদ নিজ নিজ দেশের জন্য সংবিধান রচনা করার ক্ষমতা লাভ করে। রাষ্ট্রদূত ব্রিটিশ কমনওয়েলথ ভুক্ত থাকবে কিনা নিজ নিজ দেশের গণপরিষদ তা নির্ধারণ করবে।

এ আইন অনুযায়ী দেশীয় রাজ্য গুলোর উপর হতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে তারা ইচ্ছা করলে স্বাধীন থাকতে পারবে অথবা পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে পারবে।

এই আইনে উল্লেখ করা হয় যে নতুন সাংবিধানিক রচিত ও প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত উভয় রাষ্ট্রকে নিম্নোক্ত বিধানগুলো মেনে চলতে হবে:

নিজ নিজ ট্রাস্টের মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শক্রমে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করবে।

মন্ত্রিসভার পরামর্শক্রমে গভর্নর জেনারেল শিক্ষক নিয়োগ করবেন।

এ আইন অনুযায়ী গভর্নর জেনারেল গভর্নর এর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বিচার-বুদ্ধি জনিত ক্ষমতা এবং বিশেষ দায়িত্বের অবসান ঘটবে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আইন এর সঙ্গে সঙ্গতি নেই এই অজুহাতে রাষ্ট্রদূতের কোন আইন নাকচ করা যাবে না।

পরিশেষে বলা যায় যে ১৯৪৭ সালের ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি উপমহাদেশের এক ঐতিহাসিক ঘটনা এর ফলে ব্রিটিশ ভারত থেকে দূরীকরণ করা হয় এবং পাকিস্তান ও ভারত দুটি ভিন্ন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।