প্রশ্ন: এ সময় ভাই-বোনদের একজন শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।’ কে আব্বা ডাকতে চেয়েছিল?
উত্তর: শেখ কামাল
আত্মজীবনী অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর ভাষায়- ‘একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। এক সময় কামাল হাচিনাকে বলছে, “হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি। ” আমি আর রেণু দু’জনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, “আমি তো তোমারও আব্বা। ”
কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস।
রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়-স্বজন ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। ’
সেদিনের সেই হাচু আপা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেন, ‘আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময়গুলো কারাবন্দি হিসেবেই কাটাতে হয়েছে। জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়েই তার জীবনে বারবার এই দুঃসহ নিঃসঙ্গ কারাজীবন নেমে আসে। তবে তিনি কখনও আপোস করেন নাই।
ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই। তার জীবনে জনগণই ছিল অন্তঃপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তার মন কাঁদত। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন- এটাই ছিল তার জীবনের একমাত্র ব্রত…। ’
আরো জানুন
‘নিজের জীবনের সুখ আরাম আয়েশ ত্যাগ করে জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এক আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন স্বাধীনতা। বাঙালি জাতিকে বীর হিসেবে বিশ্বে দিয়েছেন অনন্য মর্যাদা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে বিশ্বে এক রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন…। ’
বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল থেকে আত্মজীবনী লিখেছেন, ১৯৬৬-৬৯ কারাগারে থাকাকালে। জেল-জুলুম তাড়া করে ফেরা মানুষটি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গকৃত প্রাণ সদাব্যস্ত মানুষ আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছিলেনও। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তারই স্বাক্ষর বহন করে।
৫ আগস্ট শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান শেখ কামাল ১৯৪৯ সালে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে ১৯৪৯ সালের ১৯ জুলাই গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু এবং ১ দিনের কারাবরণ করেন। ঢাকায় সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রদানের জন্য পুনরায় তিনি একই বছর ৩১ ডিসেম্বর কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। বন্দি থাকেন ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
অর্থাৎ শেখ কামালের জন্মের সময় তিনি মুক্ত ছিলেন। তবে ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে শামিল হয়ে ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ৭১ দিন কারাগারে থাকেন। অবশ্য তার আগে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। অর্থাৎ শেখ কামালের জন্মের সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঢাকা শহরের বাসিন্দা।